শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

কর্মস্থলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত

কর্মস্থলে ব্যক্তিত্বের সংঘাত

কর্মস্থলে সহকর্মীর সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাত ঘটলে শুরু হয় অশান্তির বাতাবরণ। কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে একে বলা হয় ইগো ক্ল্যাশ। যা স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা অফিসে। ফলে নষ্ট হয় কাজের পরিবেশ। বিঘ্ন ঘটে স্বাভাবিক কাজকর্মে।

সকাল থেকেই মুড-অফ হাসান সাহেবের। কারও সঙ্গে ভালো করে কথা বলছেন না। সহকর্মীরা নিজে থেকে কথা বলতে গেলেও কেমন যেন খেপে উঠছেন। কাজেও তেমন মন নেই, সেটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কারণ দু'ঘণ্টায় তার টেবিল থেকে একটি ফাইলও পাস হয়নি। যারা এই অফিসে কাজ করেন, তারা সবাই জানেন মাঝে মাঝেই বসের সঙ্গে হাসান সাহেবের ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটি হয়। সংঘাত হয় ব্যক্তিত্ব নিয়ে। তারপর কিছুদিন ধরে চলতে থাকে তার মুড-অফ পর্ব। আসলে তিনি ভীষণ স্বাধীনচেতা। নিজের কাজ, নিজের ডিপার্টমেন্ট স্বাধীনভাবে চালাতে পছন্দ করেন আসলাম সাহেব। অপরদিকে তার বস আবার ঠিক উল্টা। তার অনুমোদন ছাড়া স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তিনি মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু হাসান সাহেব তার সিদ্ধান্তে অনড়, অচল। তার কাছে এটা স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ ছাড়া কিছুই নয়। ফলে মাঝে মাঝে ব্যক্তিত্বের এই সংঘাতের ফল ভোগ করতে হয় পুরো অফিসকেই। সহকর্মী বা ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মনান্তর বা মতান্তর সবারই কমবেশি হয়ে থাকে। কেউ এটা সরাসরি প্রকাশ করেন, কেউবা চেপে রেখে মনোকষ্টে ভোগেন। কিন্তু এই সংঘাতের দ্বন্দ্ব ভেতরে-বাইরে অশান্তি বাড়ানো ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান করে না। অনেক সময় এরকম ঘটনা থেকে ব্যক্তিগত সমস্যার উদ্রেক হয়। পাশাপাশি এ রেশ লাগে অন্যা সহকর্মীদের মাঝেও। ছড়িয়ে পড়ে তুষের আগুনের মতো। বাধা আসে উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের পথে। ব্যক্তিত্বের সংঘাত এড়াতে রইল কয়েকটি পরামর্শ।

কি করবেন :

* অফিসে বিভিন্ন ধরনের মানুষ থাকেন, তাদের সবাইকে যে আপনি পছন্দ করবেন এমনটি সব সময় হয় না। কিন্তু মানুষটি আপনার অপছন্দের বলেই তার সঙ্গে সংঘাতে যাওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়। প্রথমে ভালো করে বুঝে দেখুন তিনি যা বলছেন তার মধ্যে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে কিনা। হয়তো দেখা যাবে তার সঙ্গে আপনি আংশিকভাবে সহমত, সে ক্ষেত্রে সংঘাতে না গিয়ে একটি মধ্যস্থতা করে নিলে সমস্যা সহজেই মিটে যাবে। িঅফিসে কারও সঙ্গে, তিনি আপনার জুনিয়রই হোন বা বস, চট করে মাথা গরম করবেন না। তিনি রেগে গেলে বা অযৌক্তিক কথা বললেও আপনি মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। যতটা সম্ভব শান্ত থেকে ধীরে ধীরে আপনার বক্তব্য বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনি শান্ত থাকলে, তিনিও বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারবেন না। যদি দেখেন পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে তাহলে তখনকার মতো ইতি টানুন। পরে যখন দু'জনই স্বাভাবিক থাকবেন, তখন আলোচনায় বসুন।

* অনেক সময় দু'জনের মধ্যে সংঘাত লাগলে তৃতীয় ব্যক্তির সাহায্যে তা সহজে মিটে যেতে পারে। কাজ বা অন্য কোনো ব্যাপারে কারও সঙ্গে কথা কাটাকাটি হলে কোনো অভিজ্ঞ আস্থাভাজন কলিগের সঙ্গে পরামর্শ করুন। তার পরামর্শ যুক্তিগ্রাহ্য হলে সমস্যাটা মিটিয়ে ফেলুন। িআপনার অফিসে আপনি শুধুই একজন ওয়ার্কার এটা ভুলে যাবেন না। নিজের ব্যক্তিগত কানেকশন, ক্ষমতা বা পদমর্যাদার সুবিধা নিয়ে অন্যকে কাবু করার চেষ্টা করাটা অন্যায়। এতে শুধু তার চোখেই নয়, অফিসের অন্যদের চোখেও ছোট হয়ে যাবেন।

* নিজের ভুল মেনে নিন। অনেক সময় আমরা ভুল সিদ্ধান্ত বা কাজ করার পর শুধু তর্কের খাতিরেই তর্ক করে যাই। এতে কাজের সুবিধা তো হয়ই না, অন্যের কাছে পরে হাসির খোরাক হতে হয়। সে জন্য যখনই মনে হবে আপনি কোনো ভুল বা বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলছেন, তখনই ক্ষমা চেয়ে নিন। ভুল স্বীকার করা খুবই শক্ত কাজ, এটা করতে পারলে আপনি সবার শ্রদ্ধাভাজন হতে পারবেন। হয়ে উঠবেন আস্থাভাজন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর