মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঘন ঘন চাকরি বদল ঠিক নয়

শামছুল হক রাসেল

ঘন ঘন চাকরি বদল ঠিক নয়

অনেকে এক কাজে বেশিদিন স্থায়ী হন না। প্রতিনিয়ত চাকরি বদল করেন। এ স্বভাবটি ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয় নিয়েই আজকের এ প্রতিবেদন। কোনো কাজই পছন্দ হচ্ছে না? আজ সেল্স ভালো লাগে তো, ছ’মাস পরে মনে হলো শিক্ষকতাই ভালো ছিল! ঘন ঘন চাকরি বদলের এই সিদ্ধান্ত আপনার ক্যারিয়ারে কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা তুলে ধরা হলো— আমাদের দেশে অনেকেই আছেন ছয় মাস কি একবছরও একই প্রতিষ্ঠানে বা একই ধরনের কাজে টানা লেগে থাকতে পারেন না। তাদের কাছে একঘেয়েমি চলে আসে, বৈচিত্র্য চায়। ফলে চাকরি ছেড়ে দেওয়া, আবার নতুন চাকরি খোঁজা- এভাবে তারা চাকরি বদলে চলেন এবং বিচিত্রসব কাজে অল্প অল্প করে অভিজ্ঞ হন। কিন্তু একসময় দেখা যায়, তাদের আবেদনের সঙ্গে বায়োডাটা পাঠানোর পর চাকরির জন্য সাক্ষাৎকারে ডাক আসছে না। বায়োডাটায় কাজের অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন পেশার নাম আর চাকরি ক্ষণস্থায়ী ও বদলানোর সংখ্যা দেখে চাকরিদাতা বুঝতে পারেন প্রার্থী অস্থিরমতি। তার প্রতিষ্ঠানেও সে বেশিদিন থাকবে না। এই অস্থিরতারও কারণ রয়েছে, রয়েছে জটিল মানসিক সমস্যা। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায় নিয়েই রইল কিছু পরামর্শ-

নাম : সাইফুল ইসলাম (ছদ্মনাম), বয়স : ৩০ বছর। শিক্ষাগত যোগ্যতা : এম এ (ইংরেজি)। কাজের অভিজ্ঞতা : মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ (দু’বছর), পাবলিক রিলেশন অফিসার (এক বছর), অ্যাড মেকিং (ছ’মাস), কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ (চার মাস), শিক্ষকতা (বর্তমান)। বায়োডাটার এই পর্যন্ত পড়েই চোখ আটকে গেল একটি প্রাইভেট কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জামান সাহেবের। প্রার্থীর কাজের অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝা যায়, সাইফুল মানসিকভাবে খুব অস্থির। অনেক কাজই সে করছে; কিন্তু কোনোটিই মন দিয়ে নয়। শুধু তাই নয়, কোনো পেশার প্রতি ভালোবাসাও তার নেই। সুতরাং, এই কাজটিও যে সে মন দিয়ে করবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। অতএব, জামান সাহেবের বিচারে সাইফুলের বায়োডাটা বাতিল! পুরো ঘটনাটিই কাল্পনিক। তবে অবাস্তব বললে ভুল হবে। বর্তমানে সাইফুলের মতো অনেক ছেলেমেয়েই এ কারণে বাতিল হয়ে যাচ্ছে লোভনীয় চাকরির সুযোগ থেকে। তারা কোনো চাকরিতেই মানসিক শান্তি খুঁজে পায় না। আজ এটা তো কাল ওটা, কোনো ক্ষেত্রেই তাদের মন বসে না। মনে হয়, এর চেয়ে ওখানেই বোধ হয় ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। ভুলে যায় যে, সব ক্ষেত্রেই প্রথম সারির চাকরি ভালো এবং একইভাবে কোনো চাকরিতেই মনের মতো সুযোগ-সুবিধা বা বেতন পাওয়া যায় না।

কেন এমন হয় : ঠিক এই প্রশ্নটিই করা হয়েছিল প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোহিত কামালকে। তিনি বলেন, ব্যক্তিত্বের অভাবে এরকম হয়ে থাকে। কারণ ব্যক্তিত্ব হলো মানুষের সব বৈশিষ্ট্যের সমাহার। এ সমাহারে কোনো ঘাটতি থাকলে এ সমস্যা হয়। তা ছাড়া ছোট বেলা থেকে বাবা-মায়েরা আজকাল নিজেদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা চাপিয়ে দিচ্ছেন তাদের সন্তানের ওপর। ফলে ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারছে না। তারাই বড় হয়ে প্রথম চাকরি পেলে নিজেদের ইচ্ছাগুলো খুঁজতে থাকে তার কাজের মাধ্যমে। সে কারণেই এক কাজ ছেড়ে অন্য কাজ।

কী করবেন : ছেলেবেলা থেকে নিজের আগ্রহ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যাতে প্রথম অর্থ রোজগার শুরু করেই এমনটা মনে না হয় যে, হাতে চাঁদ পেলাম, এবার নিজের মর্জিমতো নিয়ম ভেঙে চলব। প্রথম থেকেই যুক্তিবাদী হন। নিজে ভবিষ্যতে যা করতে চান, তাই নিয়েই প্রথম থেকে মাথা ঘামান। প্রথমদিকে যদি সন্তুষ্ট নাও হন, চেষ্টা চালিয়ে যান। হাল ছাড়বেন না। কেউ প্রথমেই শীর্ষে পৌঁছতে পারে না। তার জন্য দরকার কাজের প্রতি নিষ্ঠা। হঠকারিতা ভালো নয়। ঘন ঘন যাতে চাকরি পরিবর্তন না করতে হয় সে জন্য নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনা জরুরি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর