২২ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৩২

পুলিশ ফাঁড়িতে যুবক খুন: নোমানের অনুপস্থিতিতে শুরু হচ্ছে বিচার

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

পুলিশ ফাঁড়িতে যুবক খুন: নোমানের অনুপস্থিতিতে শুরু হচ্ছে বিচার

বুধবার রায়হান খুনের মামলায় আদালতে আসামি পুলিশ সদস্যদের হাজিরা করা হয়।

ক্রোকের জন্য বাড়িতে গিয়ে নোমানের কোন মালামাল পায়নি পুলিশ। এবার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেবে আদালত। এরপর আইনানুযায়ী নোমানের অনুপস্থিতিতেই শুরু হবে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদ নামের যুবক খুনের মামলার বিচার কাজ। 

বুধবার মামলার ধার্য্য তারিখে আবদুল্লাহ আল নোমানের ব্যাপারে আদালত এমন আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এমএ ফজল চৌধুরী। 

এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফ্রান্সে অবস্থানরত নোমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। মামলার অপর পাঁচ আসামি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তারা সবাই পুলিশ সদস্য।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এমএ ফজল চৌধুরী জানান, “পলাতক আসামি আব্দুল্লাহ আল নোমানের মালামাল ক্রোক করতে হুলিয়া ও ক্রোকি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত। কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পায়নি। তার কোনও মালামালও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ।”

এমএ ফজল আরও বলেন, “পরবর্তী আদেশের জন্য বুধবার ধার্য্য ৎ ছিল। আদালত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাপানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কমপক্ষে দুটি পত্রিকায় নোমানের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হবে। এর মাধ্যমে তাকে অবহিত করা হবে যে, তিনি আদালতে হাজির না হলে তার অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য শুরু হবে।”

পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ শিগগিরই হবে বলেও জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

বুধবার সকালে সিলেটের মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আমিরুল ইসলামের আদালতে রায়হান হত্যা মামলায় কারান্তরীণ পাঁচ পুলিশ সদস্যকে হাজির করা হয়। এই পাঁচ পুলিশ সদস্য হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান উদ্দিন, এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদ।

রায়হানকে নির্যাতনের সময় তারা সবাই বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। পরে তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। 

এর বাইরে মামলার আসামি করা হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুড়িডহর গ্রামের ইসরাইল আলীর ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমানকে। এসআই আকবরের সহযোগিতায় ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তনের অভিযোগে তাকে আসামি করা হয় ওই মামলায়। নোমান বর্তমানে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন বলে নিজেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

পাঁচ আসামির উপস্থিতিতে আদালত নোমানের মালামাল ক্রোক নিয়ে পুলিশি প্রতিবেদন দেখে পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও তার মালামাল ক্রোকের পরোয়ানার বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য্য ছিল। কিন্তু পুলিশের কাছ থেকে সেদিন পরোয়ানার প্রতিবেদন না পাওয়ায় শুনানি পিছিয়ে বুধবার নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে, আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে রায়হানের মা সালমা বেগম নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “মামলার প্রধান সাক্ষী নাকি আত্মহত্যা করেছেন। অন্য এক সাক্ষীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এই অবস্থায় কারান্তরীণ আসামিরা ছাড়া পেলে তিনি ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় পড়বেন।”

সিলেটের শিশু রাজন ও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রসঙ্গ টেনে সালমা বেগম বলেন, “রাজন হত্যাকাণ্ডের বিচার যেভাবে দ্রুত হয়েছে, আমিও চাই রায়হান হত্যার বিচারও একইভাবে হোক। রাজন ও আবরার হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের মতো রায়হানকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে যারা খুন করেছে তাদেরও যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।”

মামলার একমাত্র পলাতক আসামি নোমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে রায়হানের মা বলেন, “এর আগে রাজন হত্যা মামলার আসামিকেও সৌদি আরব থেকে সরকার ধরে নিয়ে এসেছে। সরকার চাইলেই নোমানকে দেশে ফেরাতে পারবে।”

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ অক্টোবর ভোরে সিলেট শহরের আখালিয়ার এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি সেখানে মারা যান। পরদিন তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর