১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৮:৩০

রোহিঙ্গা পাচারের ‘ট্রানজিট রুট’ সিলেট, দালাল চক্রের সন্ধানে পুলিশ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

রোহিঙ্গা পাচারের ‘ট্রানজিট রুট’ সিলেট, দালাল চক্রের সন্ধানে পুলিশ

ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা পাচারের ‘ট্রানজিট রুট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট। নানাভাবে প্রলুব্ধ করে দালালরা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের চেষ্টা করছে। টাকার বিনিময়ে দালালরা করছে এ অপকর্ম। 

সম্প্রতি সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা আটকের পর এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই দালাল চক্রের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। 

এদিকে, দালালের হাত ধরে ভারতে অনুপ্রবেশে ব্যর্থ হলে রোহিঙ্গারা সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে-বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে সিলেট বিভাগের তিনটি স্থান থেকে ২৪ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর চলতি বছরে আটক রোহিঙ্গার সংখ্যা শতাধিক। 

সবশেষ গত রবিবার বিভাগের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। এদিন সকালে চট্টগ্রাম থেকে মৌলভীবাজারে আসা একটি বাস থেকে তাদের আটক করা হয়। 

মৌলভীবাজারে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক ক্যশৈনু ছুটি শেষে চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে মৌলভীবাজার আসার পথে সেই গাড়িতে থাকা কিছু যাত্রীদের রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ হয় তার। ক্যশৈনুর মাধ্যমে খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি টিম সকাল ৭টায় পৌরশহরের চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে ওই বাস আসামাত্র তল্লাশি চালিয়ে এতে থাকা নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৬ জন রোহিঙ্গা যাত্রী আটক করে। একই দিন ভোর ৬টায় মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলায় বিজিবির দ্বায়িত্বপূর্ণ এলাকা নালাপুঞ্জি থেকে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে জুড়ী থানা পুলিশ ও লাঠিটিলা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

আটককৃত রোহিঙ্গা যুবক শরীফ হোসেন জানান, তিনি কক্সবাজারের ১ নম্বর কুতুপালং ক্যাম্পের জাহিদ হোসেনের ছেলে। তিন ওই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। পরে তিনি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং আগরতলায় পৌঁছে সেখান থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে চেকপোস্টে ধরা পড়েন। পরে তাকে ত্রিপুরা রাজ্যের তারেকপুর বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বিএসএফ তাকে নালাপুঞ্জি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ব্যাক করে।

এর আগে ১৪ ডিসেম্বর জুড়ীর একই এলাকা থেকে ৮ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। ওই ৮ জনকে স্থানীয় জনতা আটক করে বিজিবি ও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পরে-দালাল মারফত জুড়ীর এ সীমান্ত ব্যবহার করে তাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল।

এছাড়াও চলতি বছরের ২৫ আগস্ট ভারতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল সীমান্ত এলাকা থেকে আটক হন ৭ জন রোহিঙ্গা। ১১ জুন একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের চেষ্টাকালে পুলিশ এক তরুণীসহ ৫ রোহিঙ্গাকে আটক করে। 

১২ মে মৌলভীবাজার শহরে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কের বাসস্ট্যান্ড থেকে নারী ও শিশুসহ ১৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। তবে তারা ভারতে যাওয়ার পথে নয়, উল্টো ভারত থেকে কুলাউড়া উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে গিয়ে আটক হন। তাদের গন্তব্য ছিল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। 

এছাড়াও গত তিন বছরে বিভিন্ন সময় সিলেট অঞ্চলে শতাধিক রোহিঙ্গা ধরা পড়েছেন। পরবর্তীতে তাদের কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে পাঠানো হয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সীমান্ত ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর এসব ঘটনায় স্থানীয় মানবপাচারকারী চক্রগুলো জড়িত। দালালরা টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নজর এড়িয়ে বিভিন্ন উপায়ে ভারত পাচার করে রোহিঙ্গাদের। এছাড়াও মায়ানমার থেকে ভারতে পালানো রোহিঙ্গারা সে দেশে থাকতে না পারলে দালালদের মাধ্যমে সিলেট সীমান্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসছে। এখানে এসে যারা ভালো বাংলা বলতে পারেন তারা সিলেটে বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিক হিসেবে থেকে যাচ্ছে। তবে এমন ঘটনা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অহরহ ঘটলেও এসব দালাল চক্রকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। 

যদিও পুলিশ বলছে-আটককৃত রোহিঙ্গাদের এবার জিজ্ঞাসাবাদ করে নেপথ্যের দালালদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, প্রথমত সীমান্তের বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেখে। তবে আটক হওয়া রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। 

ডিআইজি আরও বলেন, সম্প্রতি সিলেট বিভাগে ঘন ঘন রোহিঙ্গা শরণার্থী ধরা পড়ছে। এদের সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে স্থানীয় দালাল চক্র জড়িত এটা সত্য। তবে এবার যেসব রোহিঙ্গা আটক হচ্ছেন তাদের দীর্ঘসময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতাকারী দালাল চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চালাবে পুলিশ। 

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর