১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ১২:২৭

বিলুপ্তির পথে বেত বাগান

বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি

বিলুপ্তির পথে বেত বাগান

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

গ্রামীণ জনজীবনে এক সময় ঘর-গৃহস্থালির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল বেত শিল্প। বেত দিয়ে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরির পাশাপাশি তৈরি করা হতো বিভিন্ন সৌখিন সামগ্রীও। গৃস্থলির প্রায় সকল কাজেই ছিল বেতের ব্যবহার। গ্রামাঞ্চলে পথের ধারে, বাড়ির আশপাশে, পতিত জমি আর ঝোপঝাড় সর্বত্রই শোভা পেত সরু-সবুজ পাতার ছোট বড় বেত বাগান। দৃষ্টি কাড়তো সবুজাভ এসব বাগান। অনেকটা অযত্নে বেড়ে উঠতো কৃষকের অতি পরিচিত বেত গাছ। কিন্তু বর্তমানে এমন দৃশ্য বিরল। 

কালের আর্বতে হারিয়ে যাচ্ছে বেত বাগান আর মিষ্টি বেত ফলও। বন উজাড়, এ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের দৌরাত্বে বিপন্ন বেত শিল্প আর বেত বন। উদ্ভিদ পরিচিতিতে দেখা যায়- বেত একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। ভেজা ও জংলা নিচু জমিতে ভালো জন্মে। বেতগাছ জঙ্গলাকীর্ণ কাটাঝোঁপ আকারে দেখা যায়। চিরসবুজ এই উদ্ভিদটি পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৪৫ থেকে ৫৫ ফুট এবং কখনো তার চেয়েও বেশি লম্বা হয়ে থাকে। সাধারণত ছয় প্রজাতির বেত পাওয়া যায়। এদের কান্ড দেখতে চিকন, লম্বা, কাঁটাময় ও খুবই শক্ত এবং শাখাহীন। 

বেতগাছে ফুল আসে আশ্বিন-কার্তিক মাসে। ফল পাকে চৈত্র, বৈশাখ এবং জ্যৈষ্ঠ মাসে। এ ফল গ্রামের মানুষের কাছে খুবই প্রিয়। এ ফল সুস্বাদু পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। বেত দিয়ে তৈরি হতো চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারি, ঢুষি, টুপি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার সেলফ, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্পশেড আরও কতো কি। এটি গৃহনির্মাণেও কাজে লাগতো বেত। কোন কিছু বাধার ক্ষেত্রেও বেত ছিল রশির বিকল্প।

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার প্রবীণ কৃষক আবদুর রাজ্জাক জানান, আমাদের সময়ে খুবই উপকারি ছিল বেত। প্রায়োজন পড়লেই বাড়ির কাছে হাতের নাগালে পাওয়া যেতো। অনেকে আবার খোসা ছাড়িয়ে সংগ্রহেও রাখতেন। গৃহস্থালির বেশির ভাগে প্রায়োজনে কাজে আসতো বেত। বেতের ছিকায় ধান আঁটি বহন করতেন সবাই। অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন বেত বিক্রি করে। বর্তমানে চাহিদা কমে যাওয়ায় বেত বাগান তেমন একটা দেখা যায়না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রামীণ জনজীবনে এক সময় নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরির অন্যতম উপাদান ছিল বেত। বেতের তৈরি জিনিসপত্র খুবই নান্দনিক ও আভিজাত্যের প্রতীক। বর্তমানে ঝোঁপ-ঝাড়ের সংখ্যা দিন দিন কমছেই। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বেতও। ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর