১২ এপ্রিল, ২০২৩ ০৮:৩৭
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন

এবার প্রকাশ্যেই নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন মেয়র আরিফ

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

এবার প্রকাশ্যেই নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন মেয়র আরিফ

আরিফুল হক চৌধুরী। ফাইল ছবি

সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ১০ এপ্রিল রাতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘নির্বাচনে অংশ নেবেন না আরিফ’ সংবাদই সঠিক হল। শেষ পর্যন্ত লন্ডনে তারেক রহমানের সামনে প্রকাশ্যেই নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন মেয়র আরিফ। তবে বক্তব্যের এক পর্যায়ে ‘একটি সিগন্যাল’ পেয়েছেন এমন কথা বলায় এখনও দোটানায় নেতাকর্মীরা। সিলেটবাসীও অপেক্ষায় তার মুখ থেকে পরিষ্কার ‘হ্যাঁ অথবা না’ শব্দ শোনার জন্য।

লন্ডনের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেনর পার্ক এলাকার রয়েল রিজেন্সি সেন্টারে যুবদলের আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন মেয়র আরিফ। সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে শুধু এই কথাতেই সীমাবদ্ধ থাকলেন না। পরের কথায় বলে দিলেন- ‘পেয়ে গিয়েছেন সিগন্যাল’!

বক্তব্যের শুরুতে অনুষ্ঠানে আসা সবাইকে সিলেট নগরবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান। পরে দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দেন- “বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, সেজন্য সিলেট সিটি নির্বাচনে আমিও প্রার্থী হচ্ছি না।”  তবে পরের কথাতেই  ‘সিগন্যাল পেয়েছেন’ বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

মেয়র আরিফ বলেন, “সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমার নেতা তারেক জিয়ার কাছ থেকে সিগন্যাল পেয়েছি। তবে সেটা গ্রিন না রেড তা সময়ই বলে দেবে।”

তবে তার এমন বক্তব্যে নতুন কিছুর আভাস পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, তাই বিএনপি থেকে হয়তো সিটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না আরিফ। হতে পারে এটি দল থেকে পদত্যাগ করে ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিগন্যাল’!

আবার অপর এক পক্ষ বলছেন, সিটি মেয়র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে তারেক রহমানের কাছ থেকে আরও বড় কিছুর সিগন্যাল পেয়েছেন আরিফ। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সূত্র বলছে, বিএনপি সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে মেয়র আরিফ বিএনপির প্রার্থী হতে চান। সেক্ষেত্রে সিলেট ১ অথবা ৪ এর সিগন্যাল পেয়েছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সব কেন্দ্র মিলিয়ে আরিফুল হক চৌধুরীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯২ হাজার ৫৯৩ ভোট। আর বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৮৬ হাজার ৩৯৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৬ হাজার ১৯৬ ভোট বেশি পেয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেট পৌরসভাকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হয় ২০০২ সালে। প্রথম নির্বাচন হয় চার দলীয় জোট সরকার আমলে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। তিনি পৌরসভা থাকাকালে চেয়ারম্যান থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে ২০০৮ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়বার বিজয়ী হন কামরান। তৃতীয় নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। এ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মেয়র পদে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে আরিফুল হক পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ২৩০ ভোট।

সবশেষ ২০১৮ সালের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ ও অধ্যাপক জাকির হোসেন। এরপর বদর উদ্দিন কামরান মনোনয়ন পেলেও ওই নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে।

এদিকে ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর পর থেকে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোটের মাঠে চ্যালেঞ্জ করার মতো প্রার্থীর অভাব দেখা দেয় সিলেটে। তবে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিসিক কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলু। সম্প্রতি লন্ডন থেকে সিলেটে এসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

সর্বশেষ খবর