১৯ জুন, ২০২৩ ১৮:০৬
ভোটের দিনও বৃষ্টি হতে পারে

টানা বর্ষণে সিলেটে বন্যার পদধ্বনি, ভোটারদের দুর্ভোগের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

টানা বর্ষণে সিলেটে বন্যার পদধ্বনি, ভোটারদের দুর্ভোগের শঙ্কা

ইতোমধ্যে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় স্থানীয় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিয়েছে

একদিন পর সিলেট সিটির ভোট। চলছে টানা বর্ষণ। সৃষ্টি হয়েছে জলাবন্ধতা। বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে নদ-নদীর পানি। শঙ্কা দেখা দিয়েছে বন্যার। ম্লান হয়ে যাচ্ছে পূণ্যভূমি সিলেটের ভোটের আমেজ। পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান করছেন সিলেটে। তারাও শঙ্কিত টানা এই বৃষ্টি নিয়ে। বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরির্বতনের ইঙ্গিত মিলেছে।

এদিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী। কাউন্সিলর পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও আছে।

টানা বর্ষণে সিলেট সিটির বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবন্ধতা

সিলেটে ১৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি নগরীর ৩৫ নং ওয়ার্ডের সৈয়দ জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। গত ১৪ জুনের টানা বৃষ্টিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। যদিও কয়েক ঘণ্টার পরই এই পানি নেমে গেছে।

ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভারি বৃষ্টিতে পানি উঠে যেতে পারে। কিছু বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।’

নগরীর ৪২ ওয়ার্ডের মধ্যে বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ডের বেশিরভাগই নিম্নাঞ্চলের। এই ১৫টি ওয়ার্ডে ভোটের আমেজ বেশি। কেননা প্রথমবারের মতো ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচিত করবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীদের। এখন শঙ্কা বন্যার। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবন্ধতায় ম্লান করেছে এসব এলাকার ভোট উৎসব।

নগরীর ৩৮ নং ওয়ার্ডের নয়া খুরুমখলা, পীরপুর, তালুকদারপাড়া, মইয়ারচর, টুকের গাঁও ও গৌরীপুর এলাকার অন্তত ১০ জন ভোটার বলেন, ‌‌‘আমরা উন্নয়ন বঞ্চিত। সিটি করপোরেশনের সব ধরনের কর আমরা পরিশোধ করছি। বিনিময়ে কোনো উন্নয়ন পাইনি। এবার আমাদের সুযোগ এসেছে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার। স্বপ্ন দেখছি অবহেলিত এই অঞ্চল আলোকিত করার। কিন্তু কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে চরম জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে। এবার ভোট দেওয়া নিয়েও মনে শঙ্কা কাজ করছে।

নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাংবাদিক মঈন উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিদিন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বন্যার শঙ্কা তো অবশ্যই রয়েছে। এমন হলে নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে। সাধারণ মানুষ তথা ভোটারের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।’

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব ভোটকেন্দ্রে জলাবন্ধতা সৃষ্টি হবে সেসব কেন্দ্র পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে সুুবিধাজনক কেন্দ্র বাছাইয়ে অগ্রাধিকার থাকবে।

সার্বিক পরিস্থিতি কড়াভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এমন তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘আমরা আমাদের নিজস্ব মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি। কিছু কিছু সেন্টার পানিতে ছিল পরে আবার পানি নেমে গেছে। আশা করছি এমন পরিস্থিতি ভোটের দিন থাকবে না। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি আমরা। নির্বাচন কমিশন বিষটি দেখবে।’

ভোটের দিন সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন বলেন, আগামী ২১ জুন সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সোমবার ভোররাত থেকে শুরু করে বেলা ১১টা পর্যন্ত সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১২ আর সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া আজও সারাদিন থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সরমা ও কুশিয়ারা। সোমবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৩ সে.মি। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। বিকাল ৩টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড কার হয়েছে ১০.৩১ সে.মি। এ পয়েন্টের বিপৎসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সি.মি।

এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আহমদ বলেন, আমার বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কোনো সেন্টারে যদি পানি উঠে যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে  ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে নদ-নদীর পানি

এদিকে নির্বাচনে মোট কেন্দ্র থাকছে ১৯০টি। যেখানে স্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ৯৫ টি। সবগুলো কেন্দ্রেই থাকছে সিসিক্যামেরা। ঢাকা থেকে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন।

আগামী ২১ জুন অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। আগে ২৭ ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশন থাকলেও বর্ধিত ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে সিসিকে এখন মোট ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। ৭৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীতে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৩, নারী ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৬ জন।

২০১৮ সালে সিটি নির্বাচনে সিলেট নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ এবং নারী ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন। কেন্দ্র ছিল ১৩৪টি, ভোট কক্ষ ছিল ৯২৬টি এবং অস্থায়ী কক্ষ ছিল ৩৪টি। এবার ৪২টি ওয়ার্ডে কেন্দ্র বেড়ে হয়েছে ১৯০টি এবং ভোট কক্ষ ১ হাজার ৩৬৭টি। 

২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সিলেটের সকল ওয়ার্ডে এবারই প্রথম হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

সর্বশেষ খবর