৬ আগস্ট, ২০২৩ ১৯:২৩

নিজেদের বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন ও পরিবারকে সচেতন করার অঙ্গীকার সহস্র শিক্ষার্থীর

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

নিজেদের বাসাবাড়ি পরিচ্ছন্ন ও পরিবারকে সচেতন করার অঙ্গীকার সহস্র শিক্ষার্থীর

প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে চলছে সচেতনতামূলক প্রচারণা। কিন্তু এরপরও তৈরি হচ্ছে না জনসচেতনতা। বাসাবাড়িতে মিলছে এডিস মশার লার্ভা। রাস্তাঘাটে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। এই অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নগরবাসীর মাঝে পরিচ্ছন্নতার মনোভাব তৈরি করতে ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে কাজ করার দৃঢ় শপথ নিয়েছে সহস্রাধিক স্কুল শিক্ষার্থী। 

নিজেদের বাসা-বাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন করার দায়িত্ব নিয়েছে তারা। ছোটদের এই বড় দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। ডেঙ্গু প্রতিরোধ এবং যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার মানসিকতা পরিবর্তনে কোমলমতি এই শিশুরা কার্যকর বড় ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করছেন সিটি করপোরেশনের জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

আগস্ট মাসের প্রথম ৪ দিনে সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন ৬৭ জন। আর পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৫১ জন। অর্থাৎ প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে সিলেটে। এই অবস্থায় শ্রমিক বাড়িয়ে নগরজুড়ে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং মশার ঔষধ ছিটিয়েও কোন সুফল পাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। মূলত জনসচেতনতার অভাবে লোকজন বাসা-বাড়িতে জমিয়ে রাখছেন বৃষ্টির পানি। সেসব পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশার লার্ভা। নির্ধারিত ডাস্টবিনের পরিবর্তে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলার কারণেও বাড়ছে মশার উপদ্রব। এছাড়া ছড়া-খালে আবর্জনা ফেলার কারণে অল্প বৃষ্টিতে নগরজুড়ে তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রচার প্রচারণা ও অভিযান চালিয়েও জনসচেতনতা তৈরিতে ব্যর্থ হয়েছে সিটি করপোরেশন।
 
এই অবস্থায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে ‘সিলেট এসএসসি মিলেনিয়াম ব্যাচ’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় তারা ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজে তারা ‘শুভেচ্ছা দূত’ হিসেবে নিযুক্ত করেছে স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। পাইলট প্রকল্প হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে সিলেট মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডকে। 

রবিবার দুপুরে ওই ওয়ার্ডের সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তারা শুরু করেছে সচেতনতামূলক কার্যক্রম। শুরুতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতন করা হয় স্কুলের ১৩শ’ শিক্ষার্থীকে। এরপর শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নেন তিনদিনের মধ্যে নিজেদের বাসা-বাড়ি ও আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন করার। এডিস মশা ডিম পাড়তে পারে এমন সকল স্থান পরিচ্ছন্ন করে তারা নিজেদের বাসার দরজায় লাগাবেন ‘আবর্জনামুক্ত আমার আঙ্গিনা, নির্মূল করেছি ডেঙ্গুর আস্তানা’ লেখা স্টিকার। শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব নেয়, এখন থেকে তাদের বাসার কোন ময়লা ছড়া-খাল, ড্রেন অর্থাৎ নির্ধারিত স্থানের বাইরে ফেলতে দেবে না। এ ব্যাপারে পরিবারের বড়দের নিজেরাই বুঝাবে, সচেতন করবে। 

শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমাবেশ শেষে সৈয়দ হাতিম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন ও মশক নিধনের মাধ্যমে শুরু হয় পাইলট প্রকল্পের কাজ। এসময় স্কুলের পাশের একটি বাসার দেয়ালের ভেতর পাওয়া যায় এডিস মশার লার্ভা। পরে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো ধ্বংস করেন। 

এ প্রসঙ্গে ‘সিলেট এসএসসি মিলেনিয়াম ব্যাচ’র সমন্বয়ক আমজাদ হোসেইন চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় আমরা পাইলট প্রকল্প হিসেবে ২০নং ওয়ার্ডে কাজ শুরু করেছি। আগামী ৩ মাস আমরা এই ওয়ার্ডে কাজ করবো। সপ্তাহের ৫ দিন ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও ২ দিন মশক নিধনের ঔষধ ছিটানো হবে। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত। তাদেরকে সচেতন করা গেলে আমরা একটি সচেতন প্রজন্ম পাব। এই উদ্দেশ্য থেকে আমাদের এই কার্যক্রমে শিশুদের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিযুক্ত করেছি। পাইলট প্রকল্প সফল হলে আমরা সিটি করপোরেশনকে এই পদ্ধতি অনুসরণের লিখিত প্রস্তাব দেব।

২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘নগরবাসীকে অনেকভাবেই সচেতন করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু যত্রতত্র ময়লা ফেলার মানসিকতা পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। শিশুদের দিয়ে তাদের পরিবারকে সচেতন করার পরিকল্পনাটি খুবই চমৎকার ও কার্যকর হবে বলে আমি মনে করি।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘একটি পরিবারে সবচেয়ে বেশি স্পর্শকাতর সদস্য হচ্ছে শিশুরা। তারা যখন কোন বিষয়ে বায়না ধরে তখন পরিবারের বড়রা তা মানতে বাধ্য হন। আজকে যেসব শিশু শুভেচ্ছা দূতের দায়িত্ব নিয়েছে তারা যখন পরিবারে গিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকতে বলবে তখন অবশ্যই এর ইতিবাচক ফল আসবে।’

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর