২৭ অক্টোবর, ২০২৩ ১১:০৭

বিদায়বেলায় মেয়র আরিফের হাজার কোটি টাকার বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

বিদায়বেলায় মেয়র আরিফের হাজার কোটি টাকার বাজেট

আগামী ৭ নভেম্বর সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) নতুন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে বিজয়ী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সেই সাথে নগরভবনে ইতি ঘটবে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অধ্যায়। 

বিদায় নেওয়ার প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে বৃহস্পতিবার দুই মেয়াদের মেয়র হিসেবে তার শেষ বাজেট ঘোষণা করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। নগরীর উন্নয়নে তিনি ঘোষণা করেছেন প্রায় হাজার কোটি টাকার বাজেট। 

একটি আধুনিক ‘নতুন সিলেট’ গড়তে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের। আশ্বাস দিয়েছেন নগরভবনে দায়িত্ব নেওয়ায় অপেক্ষায় থাকা পরিষদকে সর্বাত্মক সহযোগিতার। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপির প্রতি। 

সিসিকের ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার নগরীর একটি কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সমপরিমাণ আয় ও ব্যয় ধরে তিনি ঘোষণা করেন ৯২৫ কোটি ৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকার বাজেট। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১১৫ কোটি টাকা কম।

বাজেটে সিসিকের নিজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে সর্বমোট ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ১১ হাজার টাকা। বাকি অর্থের উৎস হিসেবে সরকারি বরাদ্দ ও এডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থাকে দেখানো হয়েছে। এছাড়া বাজেটে রাজস্ব খাতে সর্বমোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজস্ব খাতে সবচেয়ে বেশি আয় দেখানো হয়েছে হোল্ডিং ট্যাক্সে। এই খাত থেকে আশা করা হয়েছে আদায় হবে ৪৮ কোটি ৩৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য খাতের মধ্যে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর থেকে ২৫ কোটি টাকা, ট্রেড লাইসেন্স থেকে ১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি ও দোকান ভাড়া বাবদ ৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। 

আর রাজস্ব খাতে ব্যয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে সাধারণ সংস্থাপন খাতে। এছাড়া শিক্ষা খাতে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতা খাতে ১৯ কোটি ৬০ টাকা, বিদ্যুত প্রকৌশল/সড়ক বাতি খাতে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। 

বাজেট বক্তৃতায় মেয়র আরিফ তার ১০ বছর মেয়াদে নগরের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, ১০ বছরের মধ্যে প্রথম দফা মেয়র হওয়ার পর তিনি ২ বছর কারান্তরিণ ছিলেন। আর দ্বিতীয় মেয়াদের দুই বছর সবকিছু স্থবির ছিল মহামারি করোনায়। এরপরও ৬ বছর সময় তিনি নগরের উন্নয়নে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এই সময়ের মধ্যে তার উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের মধ্যে ছিল নগরীর সকল প্রধান ও অলিগলির সড়ক সম্প্রসারণ ও সড়ক বিভাজন স্থাপন, ২৬.৫০ বর্গ কিলোমিটার থেকে সিটি করপোরেশনকে ৫৯.৫০ বর্গকিলোমিটারে উন্নীতকরণ, দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়ককে তারের জঞ্জালমুক্ত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করা, ছড়া-খাল উদ্ধার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ, দীঘি ও পুকুর উদ্ধার ও রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশের সর্বাধুনিক বাস টার্মিনাল ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, গণপরিবহন হিসেবে নগর এক্সপ্রেস চালু, নগরীর বিভিন্ন স্থানে সিটি করপোরেশনের বেদখল হয়ে যাওয়া কোট কোটি টাকার ভূসম্পত্তি উদ্ধার, হযরত মানিকপীর (রহ.) কবরস্থান সংস্কার ও আধুনিকায়ন ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে আক্ষেপও করেন। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনে যেভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেভাবে সিসিক পায়নি। বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো আটকে রাখা হয়েছে। 

আগামীর সমৃদ্ধ সিলেট গড়তে হলে ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা’ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেকটা সহজ হলেও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক কিছুর উপর নির্ভরশীল। অথচ ‘আগামীর সিলেট’ কিংবা আজ থেকে ৫০ বছর পর আমরা কিভাবে সিলেট নগরীকে দেখতে চাই, তার চিন্তাভাবনা শুরু করা জরুরি।  

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

সর্বশেষ খবর