৩১ অক্টোবর, ২০২৩ ২২:১৭

সিলেটে গাড়ি ভাঙচুর, রেললাইনে আগুন, যুবদল নেতা নিহত

নিজস্ব প্রতিবেক, সিলেট

সিলেটে গাড়ি ভাঙচুর, রেললাইনে আগুন, যুবদল নেতা নিহত

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিনে উত্তপ্ত ছিল সিলেট। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের সিলেট অংশের বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে ও আগুন দিয়ে অবরোধ করেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে অবরোধ সমর্থকরা। রেললাইনেও আগুন দিয়েছে তারা। 

পিকেটিংকালে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন যুবদলের এক নেতা। প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অবরোধ চলাকালে সিলেট থেকে দুরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে  আসা কিছু বাস দুপুর পর্যন্ত সিলেট এসে পৌঁছায়। পথিমধ্যে কিছু গাড়ি অবরোধকারীদের পিকেটিংয়ের শিকার হন। 

মঙ্গলবার সকাল থেকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং শুরু করেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লালাবাজার এলাকায় ১০-১২টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন যুবদল নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশের গাড়ি দেখে পালানোর চেষ্টা করেন তারা। পালানোর সময় গাছে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে দিলু আহমদ জিলু নামের যুবদলের এক নেতা গুরুতর আহত হন। 

আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা ১টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত জিলু গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মদনগৌরী এলাকার এলাইছ মিয়ার ছেলে।

সিলেট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে কয়েকটি মোটরসাইকেলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজারে পিকেটিং করতে যান যুবদল নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশ এসে যুবদল নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। ধাওয়া খেয়ে মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী শাহ সুন্দর এলাকার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে জিলু গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনি মারা যান। 

এদিকে, সিলেট জেলা বিএনপি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জিলুর মৃত্যুর জন্য পুলিশকে দায়ী করে। জেলা বিএনপির উপ দপ্তর সম্পাদক মাহবুব আলম প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, জিলুকে বহনকারী মোটরসাইকেলকে চাপা দেয় পুলিশের গাড়ি। এতে মোটরসাইকেল থেকে ছিঁটকে পড়ে জিলু গুরুতর আহত হন। পরে তাকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। জিলুর মৃত্যুর জন্য পুলিশই দায়ী।

পুলিশ হেফাজতে জিলুর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর সোবহানীঘাটে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এতে অংশ নেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন দিনার ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান প্রমুখ।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানান, সকালে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে পিকেটিং করার চেষ্টা করে অবরোধ সমর্থকরা। একপর্যায়ে পুলিশের গাড়ি দেখে তারা পালানোর চেষ্টা করে। পালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সাথে ধাক্কা খায় জিলুর মোটরসাইকেল। এতে গুরুতর আহত হন জিলু। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এতে আরও একজন আহত হয়েছেন। 

এদিকে, সকাল থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। সকাল ৯টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার অতিরবাড়ি এলাকায় গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। এছাড়া একই মহাসড়কের তেতলী, লালাবাজার ও দাউদপুরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে পিকেটিং করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি  এলাকায় রেললাইনে আগুন দেয় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। তবে ওই সময় ট্রেন চলাচল না করায় কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বেলা আড়াইটায় দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে অবরোধ সমর্থকরা। এছাড়া দুপুরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের দাউদপুর এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদল নেতাকর্মীরা। এসময় তারা বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ গিয়ে ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

সর্বশেষ খবর