২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৬:২৭

কুষ্ঠরোগী বাড়ছে সিলেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

কুষ্ঠরোগী বাড়ছে সিলেটে

আজ রবিবার বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের শেষ রবিবার এ দিবস পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আত্মমর্যাদার পরিবেশ, কুষ্ঠ-কলঙ্কের হবে শেষ।’ দিবসটি উপলক্ষে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে রবিবার সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে ৫৩০ জন কুষ্ঠ রোগী রয়েছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে কুষ্ঠ সম্পূর্ণ নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এটি অর্জনে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে।

তথ্যমতে, সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বেশী ২৩০ জন কুষ্ঠ রোগী মৌলভীবাজারে। এছাড়া সিলেটে ১৮০, হবিগঞ্জে ১১৭ ও সুনামগঞ্জে ১০৩ জন কুষ্ঠ রোগী রয়েছেন। এদের অধিকাংশই চা শ্রমিক ও খেটে খাওয়া পরিবারের সদস্য।

গত বছর জেলায় কুষ্ঠরোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭৯ জন। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শনাক্তদের মধ্যে ২৮ জন নারী ও পুরুষের সংখ্যা ৫১ জন। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে দুজনের। 

জানা গেছে, জেলায় কুষ্ঠরোগ শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই চা-বাগানের শ্রমিক পরিবারের। দেশের কুষ্ঠ চিকিৎসার সরকারি ৩টি হাসপাতালের মধ্যে সিলেটের ৮০ শয্যার কুষ্ঠ হাসপাতাল অন্যতম। ৮০ শয্যার হাসপাতাল হলেও সিলেটের হাসপাতালটিতে শয্যাসংখ্যা রয়েছে ৪৮টি। তিনটি ওয়ার্ডে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত সিলেট কৃষ্ঠ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৫ জন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৩ জন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জেলায় কুষ্ঠরোগী ছিল ৪৬ জন। ২০২০ সালে ১৯ জন, ২০২১ সালে ৩৭ ও ২০২২ সালে ৩৬ জন শনাক্ত হয়।

কুষ্ঠ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে নয়, মৃদু সংক্রামক। জীবাণুর মাধ্যমে এর সংক্রমণ হয়। এ জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। প্রথমে চামড়ায় হালকা ফ্যাকাশে বাদামি বা লালচে অনুভূতিহীন দাগ, যেখানে চুলকায় না, ঘামে না এবং ওই স্থানে লোম থাকে না। মুখে, ঘাড়ে বা বুকে-পিঠে ব্যথাহীন দানা বা গুটি, কানের লতি ফুলে যাওয়া, হাত-পা চোখে অনুভূতি না পেলে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা জানান চিকিৎসকেরা।

সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মির্জা ওমর বেগ বলেন, চা-বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি। তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। চা-বাগানের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। দ্রুত শনাক্ত এবং নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খেলে কুষ্ঠরোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হন। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে বিকলাঙ্গ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, কুষ্ঠরোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছেন, এর মানে এই নয় যে রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। আগেও অনেকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হতেন, তবে তারা শনাক্ত হতেন না। এখন মানুষের সচেতনতা বাড়ছে, তারা চিকিৎসা নিতে আসছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠরোগ নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে কার্যক্রম বাড়ানোয় সুফল এসেছে।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

সর্বশেষ খবর