৪ জুলাই, ২০২৪ ১১:৩৬

দুর্যোগে বিপর্যস্ত সিলেট

সিলেট ব্যুরো

দুর্যোগে বিপর্যস্ত সিলেট

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুড়দেও গ্রামের দুই ভাই শওকত আলী ও আমির আলী। দুইজনেরই পেশা কৃষি। কৃষির আয় দিয়েই চলে যেত দুই ভাইয়ের ১২ সদস্যের সংসার। চলতি বছর তিন দফা বন্যায় শওকত আলী ও আমির আলী সর্বস্বান্ত। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বসতঘর। কৃষিকাজও বন্ধ। অসহায় দুই ভাই এখন পরিবার নিয়ে গ্রামে আশ্রিত। শওকত ও আমির শূন্য ভিটায় ঘর তোলার স্বপ্ন দেখতেও ভয় পাচ্ছেন।

একই উপজেলার পাড়ুয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বেড়াই ও নোয়াগাঁওয়ের আবদুল ওয়াহিদও ব্যবসা-বাণিজ্য হারিয়ে বিপর্যস্ত। দুইজনেরই এক সময় ছিল পাথরের ব্যবসা। কয়েক বছর আগে ভোলাগঞ্জ কোয়ারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সেই ধাক্কা সামলানোর আগেই ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং চলতি বছরের তিন দফা বন্যায় তছনছ হয়ে গেছে দুজনের জীবন।

নুরুল ইসলাম ও আবদুল ওয়াহিদ জানান, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঘরে ঘরে এখন হাহাকার চলছে। কোয়ারি বন্ধ হওয়ার পর নিম্ন আয়ের মানুষ কোনোরকম টিকে থাকার লড়াই করছিলেন। কেউ কৃষি আর কেউ পর্যটননির্ভর কাজে জড়িয়ে ছিলেন। কয়েক দফা বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট উপজেলার বেশিরভাগ নিম্নআয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা পাথরকেন্দ্রিক ছিল। কয়েক বছর ধরে ভোলাগঞ্জ, জাফলং, সারপিং, উৎমা, শ্রীপুর, রাংপানি, লোভা ও বিছনাকান্দিসহ সবকটি কোয়ারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাথর উত্তোলন, পরিবহন, ভাঙা ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে এসব নিম্নআয়ের মানুষ বিকল্প পেশা হিসেবে মৎস্য, কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। কেউ কেউ স্থানীয় পর্যটনের সঙ্গে জড়িয়ে নেন।

ঘুরে দাঁড়ানোর এই যুদ্ধে প্রথম ধাক্কা আসে ২০২২ সালের বন্যায়। অভাবের সংসারে সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দেয় চলতি বছরে তিন দফা বন্যা। কৃষি ও মৎস্য দিয়ে যারা ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বন্যায় তাদের সর্বনাশ ঘটেছে। নষ্ট হয়েছে ফসল। পুকুর ও খামারের মাছ ভেসে গেছে বানের পানিতে। পর্যটনকেন্দ্রভিত্তিক পেশায় নিজেদের জড়িয়ে ছিলেন অনেকে। বন্যায় পর্যটকরা সিলেটবিমুখ হওয়ায় তাদের ভাগ্যেও নেমে এসেছে অমানিশা। ফলে অনেকে পেশা বদল করছেন। কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে আসছেন শহরে।

সিলেট হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সভাপতি ও  সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এ টি এম শোয়েব জানান, তিন দফা বন্যার কারণে সিলেটে পর্যটন ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম হয়েছেন। শুধু যে হোটেল মালিকরা ব্যবসায়িক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তা নয়, পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল যেসব নিম্নআয়ের মানুষ ছিলেন তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।  সিলেটে পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়ানো এখন কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মাত্র ৩৫ দিনের ব্যবধানে তিন দফা বন্যা হওয়ায় এখনো ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি জেলা প্রশাসন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল কুদ্দুস বুলবুল জানান, একবার বন্যার পানি নামার আগেই আবার বন্যা দেখা দেয়। যে কারণে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বন্যার ক্ষতি নিরূপণ করে জেলায় পাঠাতে পারেননি। তবে কাজ চলছে। কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত মিলিয়ে হাজার কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে জানা গেছে।


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর