বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা

ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালা

ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালাদের ব্রিটিশ আমলের জমিদারদের সঙ্গে তুলনা করা চলে। জমিদাররা যেমন নিজেদের খেয়ালখুশিমতো প্রজাদের ওপর ট্যাক্স বসাত, আবার ট্যাক্স আদায় করার জন্য প্রজাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করত, কঠোর আইন জারি করত- ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারাও তেমনিভাবে নিজেদের খেয়ালখুশিমতো ভাড়াটিয়াদের ঘরভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে, ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে তাড়ানোর ব্যবস্থা করছে, ভাড়াটিয়াদের মালামাল আটক করে বকেয়া ভাড়া আদায় করছে, ভাড়াটিয়াদের দমিয়ে রাখার জন্য মাস্তানদেরও ব্যবহার করছে। সরকার কোনো আইন করতে চাইলে- তা জাতীয় সংসদে পাস করে নিতে হয়।

কিন্তু বাড়িওয়ালাদের ঘরভাড়া বাড়াতে জাতীয় সংসদে যেতে হয় না- মুখ থেকে বের করলেই তা আইনে পরিণত হয়। আর এখন তো ঘরভাড়া ২ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ায়। এর কম হলে তাদের পোষায় না। সরকার দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান সমন্বয় করার জন্য প্রতি পাঁচ বছর পর পর জাতীয় বেতন কমিশন গঠন করে। প্রশ্ন হলো, এ বেতন কমিশনের সুফল ভোগ করছে কারা? যারা সরকারি বাসস্থানে বাস করে অথবা নিজ বাড়িতে থেকে চাকরি করতে পারছে- তারাই এ বেতন কমিশনের সুফল কিছুটা ভোগ করতে পারছে। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ক্ষুদ্র অংশ সরকারি বাসস্থানে বসবাস করতে পারছে আর সিংহ ভাগ বসবাস করছে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে ঘরভাড়া করে। জাতীয় বেতন কমিশনের জন্য বাড়িওয়ালাদের ঘরভাড়া বাড়ানোর কায়দা আবার অন্যরকম। জাতীয় বেতন কমিশন ঘোষণার কারণে একদফা বাড়ায় আবার জাতীয় বেতন কমিশন কার্যকর করার কারণে আরেক দফা বাড়ায়। বাড়িওয়ালারা তাকিয়ে থাকে কখন বেতন কমিশন ঘোষিত হবে আর সে উছিলায় ইচ্ছামতো ঘরভাড়া বাড়াবে। তাতে হিসাব করে দেখা যায়, জাতীয় বেতন কমিশন কার্যকর করার কারণে একজন কর্মচারী যতটুকু আর্থিক সুবিধা পায়, তার চেয়ে বেশি বাড়িওয়ালাদেরই দিতে হয়- অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি তো আছেই। তাই বেতন কমিশন কর্মচারীদের কাছে আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ হয়ে আসে। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, জাতীয় বেতন কমিশনের পরিবর্তে সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দয়া করে বাসস্থানের ব্যবস্থা করুন- তাতেই আমরা সবচেয়ে খুশি হব। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব। আমাদের বেতন কমিশনের প্রয়োজন নেই। আর যদি বেতন কমিশন ঘোষণা করতেই হয়- তবে আগে বাড়িওয়ালাদের নিয়ন্ত্রণ করুন, সব এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে ঘরভাড়া নির্দিষ্ট করে দিন- তারপর বেতন কমিশন ঘোষণা করুন। যদি বাড়িওয়ালাদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে বেতন কমিশন আমাদের কষ্টের কারণ হবে, আমাদের দুর্ভোগ বাড়াবে- আমাদের কোনো উপকারে আসবে না।

মোবাশ্বেরা খান দীপ্তি, ঢাকা।

 

 

সর্বশেষ খবর