বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন

ভাগ্য বদলের তাগিদে প্রতি বছর শত শত মানুষ নিজ দেশ ছেড়ে দূর পরবাসে পাড়ি জমায়। শ্রমজীবী মানুষদের এই প্রবাসী জীবনযাপন ভাগ্য কারও জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে, আর কারও জীবনে দুঃখ দুর্দশায় ঢেকে দেয়। অকালে কাউকে আবার যেতে হয় পরকালের অন্তিম যাত্রায়। তেমনি এক যুবক সাতক্ষীরার এস কে মারুফ হোসেন। যিনি গত ৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে লাশ হয়ে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে এসেছেন আপনজনদের কাছে। মারুফের মতোই প্রতিবছর হতভাগা আরও বেশ কিছু প্রবাসী শ্রমিককে বিমান বন্দরে স্বজনদের জলেভেজা অনুভূতি গ্রহণ করতে দেশে আসতে হয়, কফিনের বদ্ধ ঘরে শুভ্র পোশাকে আবদ্ধ হয়ে। তৃতীয় বিশ্বের এদেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসী শ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় এক কোটি বাঙালি শ্রমিক মধ্যপাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন। কিন্তু তাদের সুবিধা-অসুবিধা তদারকি করার মতো সরকারের লোকবল তুলনামূলকভাবে অপর্যাপ্ত। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, ওমান, দুবাই, বাহরাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, লেবানন, থাইল্যান্ড, ভারতসহ পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে আমাদের শ্রমিকরা কর্মরত আছেন শুধু বেঁচে থাকার মতো অর্থের প্রয়োজন মেটানোর তাগিদে। তাদের প্রেরিত অর্থে চলে তাদের মা-বাবা, পরিবার পরিজনের সংসার। অনেক প্রবাসী শ্রমিক নিজের জীবনের স্বাদ-আহ্লাদ ত্যাগ করে প্রবাসী জীবনের একাকিত্বের বেদনাকে হাসিমুখে বরণ করেছেন, শুধু ছেলে সন্তানকে লেখাপড়ার আলোয় আলোকিত করাবেন সেই আশায়। তারা আত্দসুখ বিসর্জন দিয়ে যান বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের কথা ভেবে। তাদের কষ্টার্জিত অর্থের পাঠানো রিমিট্যান্স থেকে লভ্য অর্থে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে। কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হলো_ প্রতিবছরই বহু প্রবাসী শ্রমিককে লাশ হয়ে দেশে আসতে হয়। গত ১০ তারিখে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য ওঠে এসেছে। তাদের মুত্যুর কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো_ ভারতসহ পাশর্্ববর্তী অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের চেয়ে আমাদের দেশের শ্রমিকদের প্রায় দ্বিগুণ বেশি টাকা খরচ করে দেশের বাইরে যেতে হয়। এত আমাদের দেশের শ্রমিকরা বাইরে যাওয়ার পর অতিরিক্ত দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে কর্মস্থানে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এর ফলে অকালে স্ট্রোক করেন, কেউবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিগত ছয় বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যে পরিমাণ শ্রমিকের লাশ এসেছে তার ৬১ শতাংশই নাকি এসেছে মধ্যপাচ্যের ছয়টি দেশ থেকে! যার মধ্যে সৌদি আরব থেকেই এসেছে ত্রিশ শতাংশ শ্রমিকের লাশ। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিককেই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে বরণ করতে হয়েছে। যাদের পাঠানো অর্থের রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসে তাদের কল্যাণ সাধনের জন্য সরকারের পর্যাপ্ত ভূমিকা পালন করা জরুরি। প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার তাগিদে যে সব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বর্তমান সরকারকে তা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে আর কোনো প্রবাসী শ্রমিককে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃতৃ্যকে বরণ করতে না হয়।

আরিফ মজুমদার, বারিধারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর