২৩ আগস্ট, ২০২২ ২১:০৬

মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা : মাইক্রোবাসের চালক-গেটম্যানকে দায়ী করে আরেকটি প্রতিবেদন

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা : মাইক্রোবাসের চালক-গেটম্যানকে দায়ী করে আরেকটি প্রতিবেদন

মিরসরাইয়ে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির জমা দেয়া প্রতিবেদনে মোটরযান অধ্যাদেশ আইন না মানায় মূলত মাইক্রোবাস চালককেই দায়ী করা হয়েছে। একই সঙ্গে গেটম্যান সশরীরে উপস্থিত না থাকায় তাকেও দায়ী করা হয়েছে। তাছাড়া এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটির তদন্তে সকল লেভেল ক্রসিং গেইট হতে নিরাপদ দূরত্বে ট্রেন আসলে উচ্চ শব্দের স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বেজে ওঠার সিস্টেম স্থাপন করা, গেট ব্যারিয়ারের স্থান হতে অবৈধ বাজার, দোকানপাট, সাইন বোর্ড ইত্যাদি অপসারণের ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ করাসহ ১১টি সুপারিশ করেছে উচ্চ তদন্ত কমিটি।

মঙ্গলবার দুপুরে রেলের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পূর্বাঞ্চলের জিএম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। এতে বিভাগীয় তদন্তে ৬টি সুপারিশ এবং উচ্চতর তদন্তে ১১টি সুপারিশগুলোর বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা হবে। তাছাড়া দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে রেলওয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ পযার্য়ের কমিটির তদন্তের ১১টি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সকল লেভেল ক্রসিং গেইট হতে নিরাপদ দূরত্বে ট্রেন আসলে উচ্চ শব্দের স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম বেজে ওঠার সিস্টেম স্থাপন করা, লেভেল ক্রসিং গেইটগুলোর কারিগরি সম্ভাব্যতা অনুযায়ী ওভার পাস/আন্ডার পাস নির্মাণ এবং অন্যান্য গেইটে শ্রেণি নির্ধারণসহ ন্যূনতম তিনজন মনজুরী ও পদায়নের ব্যবস্থা নেওয়া এবং গেইটকিপারদের প্রশিক্ষণ ও খাকি ইউনিফরম সরবরাহ করা, এলসি গেইটগুলো সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানসহ টেলিফোন সংযোগ প্রদান করা এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনা করা, এলসি গেইটের সড়ক পথের গ্রেডিয়েন্ট রেলপথের উভয় দিকে ন্যূনতম ৫০ ফুট পর্যন্ত সমান্তরাল রাখা, গেট ব্যারিয়ারের স্থান হতে অবৈধ বাজার, দোকানপাট, সাইন বোর্ড ইত্যাদি অপসারণের ব্যবস্থা নিয়ে উচ্ছেদ করা, এলসি গেইট পারাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে বিভিন্ন সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান এবং নাটিকা নির্মাণ ও প্রচার করাসহ ১১টি সুপারিশ করেছে উচ্চ তদন্ত কমিটি।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট জমা দেওয়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সুপারিশ ছিল ৬টি। এদের মধ্যে এই প্রতিবেদনে গেটম্যান ও মাইক্রোবাস চালককে দায়ী করা ছাড়াও সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে-ব্যারিয়ার ফেলানোর পর সাধারণ মানুষ যাতে উঠাতে না পারে সেজন্য প্রত্যেকটি গেট লকিং রাখতে হবে, সকল এলসি গেইটে ট্রেন আসা যাওয়ার তথ্য প্রদানের জন্য টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা করা যেতে পারে, সকল এলসি গেইটের উন্নত প্রযুক্তির প্রবর্তন, সকল এলসি গেইটে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন, সকল এলসি গেইটে বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করা এবং রেলওয়ের জিএন্ডএস রুলের (আবশ্যিক নির্দেশনা) ২৩৩/খ এর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই ঘটনার দিনই গঠিত রেলওয়ের উচ্চ ও বিভাগীয় পৃথক তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্তের কাজ করেছেন। পৃথক কমিটির মধ্যে দায়িত্বে রয়েছেন উচ্চপর্যায়ের ৪ সদস্য কমিটির আহ্বায়ক পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ট্র্যাক) মো. আরমান হোসেন। অন্যরা হলেন-এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেন, এডিশনাল সিএমই মোস্তফা মো. হাসান, এডিশনাল সিএসটি তারেক মো. সামস তুষার।

আর চট্টগ্রাম বিভাগীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) মো. আনছার আলী। কমিটির সদস্যরা হলেন-বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী-১ আবদুল হামিদ, বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (লোকো) জাহিদ হাসান, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) কমান্ড্যান্ট রেজানুর রহমান এবং বিভাগীয় মেডিক্যাল অফিসার (ডিএমও) মো. আনোয়ার হোসেন।

জানা গেছে, গত ২৯ জুলাই মিরসরাইয়ে বড়তাকিয়া নামক লেভেল ক্রসিং গেইটের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ১৩ জনের মধ্যে ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। এরপর গত ৫ ও ৬ আগস্ট পৃথকভাবে আরো দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর