১৮ জুলাই, ২০২৪ ২০:২৩

চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে নিহত ২

আহত অর্ধশত, পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে নিহত ২

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি আন্দোলনকারীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো চট্টগ্রামজুড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ টিয়ালশেল, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। বিকালে বহদ্দারহাট এলাকায় পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় দুইজন তরুণ নিহত হয়েছে। নিহত একজনের নাম ইমাদ, সে পটিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তবে নিহত অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

এছাড়া দিনব্যাপী দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অন্তত অর্ধশত মানুষ। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিকালের পর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ২৭ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, পথচারী, ব্যবসায়ী এবং পুলিশ।  

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, আহত একজনকে বহদ্দারহাট এলাকা থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের মধ্যে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। দুপুরে হঠাৎ করেই স্থানীয় ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। প্রথমে একদল নেতাকর্মী আসেন বহদ্দারহাটের মেয়রের বাড়ি থেকে। পরে আরেক দল আসেন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার সড়ক হয়ে। এ সময় তাদের হাতে কিরিচ, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে বলে স্থানীয়রা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনে শাহ্ আমানত সেতু এলাকায় জড়ো হয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। এরই মধ্যে ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। পরে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে রাহাত্তারপুলের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ। আধঘণ্টা পরেই কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণ এলাকা থেকে দলে দলে শিক্ষার্থীরা আসতে থাকেন নতুন ব্রিজের দিকে। এ সময় তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ বাধে পুলিশের। পুলিশি অ্যাকশনে টিকতে না পেরে এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর তারা বহদ্দার হাট ও বাদুরতলা এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় কোটা আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে পুলিশ সদস্যদের পিছু হটতে দেখা যায়। প্রায় আধ ঘণ্টা পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এসময় বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে চাঁন্দগাও থানার সামনে অবস্থান নেয় তারা। এরপরই থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করার চেষ্টা করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছি। পুলিশের ওপর তারা পাল্টা আক্রমণ করেছে। তাদের যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি, এটা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর হতে পারে না। ঢাকা-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করার জন্য এবং নাশকতা সৃষ্টির জন্য সমবেত হয়েছিলো। বেশ কয়েকজনকে আমরা গ্রেফতারও করেছি। বেআইনি কোনো কর্মকাণ্ড আমরা বরদাস্ত করবো না।

বিডি-প্রতিদিন/শআ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর