সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিঘ্নিতকরণ, নির্বাচনী আচরণবিধি ও আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন রাজশাহী-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, ১৪ দলীয় জোটের নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। মঙ্গলবার প্রার্থীর পক্ষে তার আইনজীবী এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে জমা দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রে আসনটিতে এই নির্বাচনকে ঘিরে যেসব অনিয়ম, চাপ প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের আচরণবিধি ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা।
অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, প্রচারণার শুরু থেকে 'রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন' নামক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের সুনির্দিষ্টভাবে 'কাঁচি' প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী তৎপরতায় যুক্ত করে। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় তৈরি করে। ভোটের দিন সকালে সংবাদমাধ্যমের সামনে আমি সিটি কর্পোরেশনের এই ভূমিকা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করছে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করি। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ নিজ নিজ ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে 'কাঁচি' প্রতীকে ভোট না দিলে সরকারি বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি প্রদান করেন।সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশে এই আসনে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত সব ওয়ার্ড কাউন্সিলরবৃন্দ টিসিবির সরকারি সুবিধাভোগীদের কার্ড আটকে রেখে 'কাঁচি' প্রতীকে ভোট না দিলে সেই কার্ড ও সুবিধা ফেরত দেওয়া হবে না বলে হতদরিদ্র ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমি অভিযোগও করি। নির্বাচনের আগের রাতে ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজাম উল আজিমকে এসব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী আটক করেও নিয়ে যায়। যদিও আর সব ওয়ার্ডে সেই একই প্রক্রিয়া চলমান থাকে।
নির্বাচনের দিন উল্লেখিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিজস্ব বাহিনী প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রে 'নৌকা' প্রতীকের ভোটারদের চিহ্নিত করে তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে নিরুৎসাহিত করে। এই ক্রমাগত হুমকি ও ভয়-ভীতির কারণে ভোটের দিন ভোটাররা নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেননি। যার প্রভাব পড়েছে ভোট প্রদানের হারে। রাজশাহী-২ আসনে এ কারণেই নিম্নতম ভোট গ্রহণের হার ২৬ শতাংশের কাছাকাছি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্প সিডিসি'র কর্মীদের 'কাঁচি' প্রতীকের পক্ষে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সিডিসি টাউন ফেডারেশন, সিএইচডিএফ, ক্লাস্টার ও সিডিসি কর্মীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রয়োজন মাফিক সুবিধা বন্ধের হুমকি দিয়ে 'কাঁচি' প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে ভোট প্রদানেও বাধ্য করা হয়। অর্থ্যাৎ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে পুরোপুরি 'কাঁচি' প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
উত্থাপিত অভিযোগসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আবেদন জানিয়ে প্রার্থী আরও দাবি করেন, ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অব্যাহত রাখেন। যা শুধু আচরণবিধি লঙ্ঘনই নয়, গুরুতর অনিয়ম ও রাষ্ট্রীয় আইনেরও লঙ্ঘন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত