শিরোনাম
১২ জানুয়ারি, ২০২৪ ১০:৫৩
বেচাকেনা কমেছে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে

পুরোনো দিনের জৌলুস হারিয়েছে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

পুরোনো দিনের জৌলুস হারিয়েছে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের

আসছে আগামী ১৪ জানুয়ারি পুরান ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব সাকরাইন। সাকরাইনের অন্যতম প্রধান অংশ ঘুড়ি উৎসব। তবে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে কমেছে বেচাকেনা। আগের মতো জোলুস নেই ঘুড়ি বেচা-কেনার। পুরানো গৌরব হারিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবেও। 

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারি বাজার, নারিন্দা, ধোলাইখাল, ধুপখোলা, গেন্ডারিয়াসহ প্রতিটি অলি-গলিতে নানা রংয়ের ঘুড়ির পশরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তবে দোকানগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার সমাগম নেই। দোকানীরা সাকরাইন উপলক্ষে নানা রং বেরঙের ঘুড়ি-নাটাই ও সুতোর পশরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন ক্রেতার। 

শাঁখারি বাজারের দোকানগুলো আকার ও মান ভেদে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোয়াদার, চক্ষুদার, দাবাদার, রুমালদার, চিলদার, রকেট, স্টার, টেক্কা, শিংদ্বার, রংধনু, গুরুদার, পান, লাভসহ রয়েছে অসংখ্য ঘুড়ি। আকারভেদে একেকটা ঘুড়ির সর্বমিম্ন দাম ৫, ১০, ১৫, ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নাটাইয়ের পশরা। যার দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং সুতার দাম হাঁকানো হচ্ছে মান ভেদে ৮০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।

শাঁখারি বাজারে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঘুরি বিক্রি করেন সুদেব শু দত্ত। তাঁর দোকান ভর্তি বাহারি রঙের ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে ছোট-বড় নাটাই ও সুতা। অন্যান্য বছর সময়টা ঘুড়ি বেচা-কেনায় ব্যস্ত সময় পার করলেও এবারের চিত্রটা সম্পন্ন ভিন্ন। আগের মতো বেচা-কেনা নেই ঘুড়ি উৎসবে তার দোকানে।

সুদেব শু দত্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে কখনো এমনটা হয়নি। এবারে বেচা-কেনা খুবই কম। সাকরাইন আসলে আগে ঘুড়ি বেচা-কেনায় ধুম পড়ে যেতো শাঁখারি বাজারসহ পুরো পুরান ঢাকাতে। আগের চেয়ে দোকানের সংখ্যা বাড়ায় বেচা-কেনা কমে গেছে। সাকরাইন উপলক্ষে আগে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা বেচাকেনা হলেও এখন সবমিলিয়ে ১০-১৫ লাখ টাকা হয়। এছাড়া পুরান ঢাকার মানুষেরা কেমন জানি বদলে গেছে এখন। আশা করছি শুক্রবার, শনিবার ভালো বেচাকেনা হবে। 

দীপ দত্ত নামের দোকানদার বলেন, আগে শাঁখারি বাজারে ১০-১৫টা ঘুড়ির দোকান ছিল। কিন্তু এখন ২৫ থেকে ৩০টা দোকান হয়েছে। এছাড়াও সবকিছুর দাম বাড়ায় বেচা-কেনা কমেছে। গতবারের চেয়ে এবার আরও খারাপ বেচা-কেনা। সেই সাথে পুরো পুরান ঢাকা জুড়ে অলি-গলিতে তরুণরা এখন মোবাইল গেইমে আসক্ত হয়ে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের আমেজ ভুলে গেছে। 
 
পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা রহমতুল্লাহ বলেন, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব কমে গেছে আগের তুলনায়। এখন নানা জটিলতায় তরুণেরা সাকরাইন উৎসবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়াও আধুনিক যুগের ডিজে পার্টি এবং আতশবাজির কারণে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়েছে। 

উল্লেখ্য, সাকরাইন মূলত পৌষসংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব। বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদযাপনে ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। সংস্কৃত শব্দ 'সংক্রান্তি' ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসেবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙ বেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এক কথায় বলা যায় সাকরাইন হচ্ছে এক ধরনের ঘুড়ি উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার নবমতম মাস, পৌষ মাসের শেষ দিনে আয়োজিত হয় যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিকার হিসাবে জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর