২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৪:৪৫

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি দেন নূরুল

অনলাইন ডেস্ক

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি দেন নূরুল

গ্রেফতার নূরুল হক ও মোহাম্মদ ইমন

আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরুল হক। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সেলিমের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল তার।

এ অবস্থায় আলোচিত ঢাকার মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে প্রতিপক্ষ সেলিম পরিচয়ে হুমকি দিলে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোনো প্রতিবন্ধকতা হবে না, উল্টো সেলিম বিপদে পড়বেন এমন পরামর্শে হুমকি দেন তিনি। নূরুল স্থানীয় কয়েকজন গরুর মাংস ব্যবসায়ীর কাছ থেকে খলিলের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন।

হত্যার হুমকির ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থেকে নূরুল হক ও ইমন নামে দুজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

আজ রবিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতে করে সীমিত ও নিন্মআয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। গত ১৯ নভেম্বর থেকে রাজধানীর শাজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল তার ‘খলিল গোস্ত বিতান’-এ ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করেন, যা ব্যাপক সাড়া ফেলে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, মাংস ব্যবসায়ী খলিলের দেখাদেখি আরো কিছু মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন। পরবর্তীতে গত ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এমন সিদ্ধান্তে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে। এসময় যে সব মাংস ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্যে মাংস বিক্রি করেন, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকেন। এছাড়া কিছুদিন পূর্বে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যায্যমূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে।

র‌্যাবের মিডিয়া উইং বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর শাহাজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে অপর একটি মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুদিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়। এছাড়াও খলিল এবং তার ছেলেকে হত্যা করার জন্য গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা ছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিল রাজধানীর শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন; যার ডায়েরি নম্বর-৮১৩। পরে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

শনিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-৩ ও র‌্যাব-৪ এর দল ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাংস বিক্রেতা খলিলের কাছে চাঁদা দাবি করা এবং খলিল ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি ও নির্দেশদাতা মো. নুরুল হক (৬৭) ও তার অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ ইমনকে (২২) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হুমকির ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেন।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিতে তিনি জানান, নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসার করে আসছেন। স্থানীয় এলাকায় তার প্রায় ৫শ ডিস এবং ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ রয়েছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সঙ্গে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ ছিল। বিরোধের জের ধরে কিছুদিন পূর্বে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে তার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে একজন তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার প্রদান করে তাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলেন। যার বিনিময়ে সে তার স্থানীয় এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোনো প্রতিবন্ধকতা বা বাধার সম্মুখীন হবেন না বলে জানানো হয়।

তিনি জানান, ব্যবসায়ীক সুবিধা পেতে নুরুল হক গত ১৮ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করেন। নুরুল হক চাঁদা দাবির পাশাপাশি তার ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে একই দিনে নুরুল ইমনকে একটি ফোন ধরিয়ে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গালাগালি করতে বলেন। ইমন নুরুলের কথামতো খলিলকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকেন এবং তাকে দুই দিনের মধ্যে হত্যা করবেন বলে গুলি ও পিস্তল রেডি করে রেখেছেন বলে জানান। এছাড়াও ইমন খলিলের মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা কাটা লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখান। পরবর্তীতে হুমকি প্রদানকৃত মোবাইল ও সিম কার্ডটি পানিতে ফেলে দেন।

তিনি আরও জানান, নুরুল হক ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করেন এবং ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসা করেন। তিনি ডিস ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করতেন। নুরুল হক এলাকায় বিভিন্নজনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়। গ্রেপ্তার নুরুলের নামে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি এবং মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে।

এছাড়া ইমন দীর্ঘদিন যাবত নুরুলের ডিসের ব্যবসার কাজে সহায়তা করতেন। এছাড়া তিনি নুরুলের সঙ্গে এলাকায় বিভিন্ন জনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে জানা যায়।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর