১ এপ্রিল, ২০২৪ ২০:০৫

মৃত প্রসূতিকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

মৃত প্রসূতিকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার নামে প্রতারণা!

রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুক্তা বানু (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর পরেও তাকে ১৪ ঘণ্টা আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। একটি ঘরে ৩ ঘণ্টা লাশ আটকে রেখে হাসপাতালের খরচ বাবদ ৬৪ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় রোগীর দেহে একশো প্রকার ওষুধ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনা তদন্তের জন্য সোমবার দুপুরে রংপুর সিভিল সার্জন তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মৃত প্রসূতির বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর বখশীপাড়া গ্রামে।

নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তা বানুর সন্তান প্রসব বেদনা উঠলে প্রথমে রংপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। তার রক্তচাপ অতিমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিজার করার সাহস পায়নি। ওইদিন রাত ২টার দিকে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বাভাবিকভাবে মৃত ছেলে সন্তান প্রসব করেন মুক্তা বানু। 

শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে মুক্তা বানু জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। সেখানকার চিকিৎসক তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) রেফার্ড করেন। কিন্তু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে বেড ফাঁকা না থাকায় মুক্তাকে ওইদিন বিকেলে নেওয়া হয় রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

মুক্তার বাবা মোক্তার হোসেন বলেন, গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে আপনার মেয়ের অবস্থা ভালো নয়, বাঁচাতে হলে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে। এরপর তারা লাইফ সাপোর্টে রাখেন। পরদিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দেখি আমার মেয়ে আর বেঁচে নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বার বার বলছি আমার মেয়ে বেঁচে নেই। তবুও তারা বেশি টাকা আদায়ের লোভে রাত ২টা পর্যন্ত আমার মেয়েকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন। রাত ২টার দিকে ৬৪ হাজার টাকার বিল ভাউচার আমার হাতে ধরিয়ে দেন। রাতেই ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু দাবি করা এক টাকা কম হলেও তারা লাশ দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বাধ্য হয়ে ভোর রাতে আবারও গ্রামে গিয়ে আরও ২৪ হাজার টাকা এনে হাসপতাল কর্তৃপক্ষকে দিয়ে লাশ নেই।

মুক্তা বানুর চাচা ওবায়দুল হক বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পরদিন শনিবার রাত ২টা পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার নামে শুধু ওষুধের বিল নিয়েছেন ১৭ হাজার টাকা। ওষুধ বিল ভাউচারে দেখা যায় চিকিৎসার নামে একশো বেশি প্রকার ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. সুনীল চন্দ্র রায় মুক্তা বানুর মৃত্যু আইসিইউতে হয়েছে, তা নিশ্চিত করলেও মৃত্যুর পরে ১৪ ঘণ্টা আইসিইউতে রাখা হয়েছে বিষয়টি অস্বীকার করেন।  এ ছাড়া তিনি একশো প্রকার ওষুধ ব্যবহারের বিষয়টিও অস্বীকার করেন।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, এ ঘটনায় ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিনকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর