৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১৯:০৭

ওরা এটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায় : শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

ওরা এটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায় : শামীম ওসমান

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ‌‘গতকাল তারা নাকি আমাকে নিয়ে খুব অশ্লীল কথা বলেছে। সাংবাদিকরা বলছে, নারায়ণগঞ্জে কিছু ঘটলে বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আপনাকে দায়ী করে কেন। আওয়ামী লীগকে দায়ী করে না, আরও এমপি, মন্ত্রী, মেয়র আছে তাদের দায়ী করে না। আমি মনে করি, তারা একারণেই দায়ী করে, কারণ ১৬ জুন আমাকে বোমা মেরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এরাই ক্ষমতায় আসার পর বায়তুল আমানে গুলি করা হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙা প্রসঙ্গে আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

শামীম ওসমান বলেন, ‘আমরা বলেছি এখানে একটি মঞ্চ হবে। এখানে ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সকল ইতিহাস ধারণ করা হবে। এখানে বিএনপিরও গর্ববোধ করা উচিত। কারণ, তাদের পূর্বপুরুষরাও এখানে অবদান রেখেছে। গতকাল দেখলাম আমাকে দায়ী করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল তো থাকারই কথা না। পঞ্চম সংশোধনিতে সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।’

‘তারা নাকি ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণ ও আমি তাদের আল্টিমেটামের শক্তি দেখতে চাই। ওরা খুব নোংরা ও অশ্লীল কথা বলেছে। এসকল অশ্লীল কথা বলে আমার লোকজনকে ফোন করার আগেই তারা বলল ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বললে সেন্ট্রালে আমাদের দাম বাড়ে। ভাই মানে আমি শামীম ওসমান। আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বড় নেতা হতে পারলে হোক। আমার আপত্তি নেই। কারা এসব কথা বলেছে আমি তাও জানি না।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজউক এটাকে ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ কারণেই এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২ তারিখে আমাদের মিটিং ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ তারিখে মিটিং হবে সেখানে এমনি এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা তো এমনিই ভাঙা হবে। তিন তারিখ কেন ভাঙতে যাব। ওরা হয়ত এটাকে ভেঙেছে অথবা ভেঙে পড়েছে। ওরা এটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায়। ওরা চায় না এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হোক। আমি তাদের বলতে চাই, আপনারা পারবেন না।’

‘এটা আমাদের কর্তব্য স্মৃতি রক্ষা করা। এখানে কেউ বাধা দিলে আমরা তাদের প্রতিহত করব, মানুষ প্রতিহত করবে। এর আগেও কিছু এক্সট্রিম বামপন্থী এটা নিয়ে কথা বলেছিল। আমি এখানে বসে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। তারা আর কোনো কথা বলেনি। এখানে জামায়াত ডান বা বাম নেই। এরা একটা গ্রুপ। ওরা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায়।’

শামীম ওসমান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙতে চাইলে বহু আগেই ভাঙতাম। দিনের বেলা ভাঙতাম। এর আগেও তো ১৯৮৯ সালে জিয়াউর রহমানকে আটকে দিয়েছি। জীবিত অবস্থায়ই তাকে আটকে দিয়েছি। সুতরাং রাতের বেলা ভাঙার প্রশ্ন আসে না। ওরা এটা করে একটা ইস্যু তৈরি করতে চায়, যেন এ কাজটা না হয়।’

‘এ ধরনের অশান্তির রাজনীতি করার চেষ্টা যারা করেন তাদের বলতে চাই অন্য এলাকায় গিয়ে এসকল কাজ করুন। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের বলেছেন, যারা জ্বালাও পোড়াও করেছে তাদের চিহ্নিত করতে। আমরা তা করিনি, চেয়েছি যে তারা শোধরাক। এমন কিছু করবেন না যেন নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে উঠে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি এ কাজটি দ্রুত করা হবে। আমি আশা করি আগামী ১৫ আগস্ট এ মঞ্চ আমরা ওপেনিং করব। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীকে নিয়েই এটা ওপেনিং করব।’

‘আমি ১৯৬৬ সনের ইত্তেফাক পত্রিকার কাটিং নিয়ে এসেছি। যেন পরবর্তী প্রজন্ম এটা জানে। আমি সংসদের ভাষণে বলেছিলাম নারায়ণগঞ্জের টাউনহল স্বাধীনতার স্তম্ভ। সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছিল আমার বাবা। ২০১৪ সালে এটা পরিত্যক্ত করা হয়েছে। সব জায়গায় এটার নাম টাউন হল। আমি সেই টাউন হল কমিটির একজন সদস্য। ২০১৪ সালেই এটা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেখানে কী করা হবে এটা নিয়ে নানান মানুষ নানান মতামত দিয়েছিল।’

‘সর্ষের ভেতর যেমন ভূত থাকে, প্রশাসনের ভেতরেও তেমন ভূত আছে’, উল্লেখ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘এই অতি আওয়ামী প্রশাসনের কারণে গত দশ বছরেও বিষয়টি সুরাহা হয়নি। নারায়ণগঞ্জেই ইতিহাস বদলে দেওয়া হচ্ছিল। এগুলো দেখার পর আমরা সোচ্চার হই, এই বইগুলো কালেক্ট করি। আমি সংসদে ভাষণ দেওয়ার পরেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত দেওয়ার পরে আমরা যদি আমাদের অতীত প্রজন্মকে মূল্যায়ন না করি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আমাদের মূল্যায়ন করবে না। আমি বলেছিলাম, এখানে ছয় দফা মঞ্চ করা হোক। এটা জেলা প্রশাসনের দায়িত্ব। জেলা প্রশাসকরা দীর্ঘদিন দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক এটা নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।’

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর