১০ এপ্রিল, ২০২৪ ০১:২৩

যাত্রীদের মারধরে চালক-কন্ডাক্টরের মৃত্যুর দাবি সাজানো গল্প: পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক

যাত্রীদের মারধরে চালক-কন্ডাক্টরের মৃত্যুর দাবি সাজানো গল্প: পুলিশ

ফাইল ছবি

সাভারের আশুলিয়ায় যাত্রীদের মারধরে নয়, ইতিহাস পরিবহনের চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়েছে আরেক গাড়ির সঙ্গে তাদের গাড়ির রেষারেষির সময়। দুই বাসের মাঝে পড়ে গুরুতর জখম হন দুজন। পরে হাসপাতালে নিলে তাদের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনার সময় গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন হেলপার পরিচয় দেওয়া আব্দুর রহমান। নিজেকে বাঁচাতে তিনিই যাত্রীদের মারধরে দুইজনের মৃত্যুর মিথ্যা গল্প ফেঁদেছিলেন।  

নিহত দুইজন হলেন- গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার ফোরকান হোসেনের ছেলে ও ইতিহাস পরিবহনের চালক সোহেল রানা বাবু (২৬) এবং ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে বাসটির কন্ডাক্টর হৃদয় (৩০)। তারা রাজধানীর মিরপুরে থাকতেন এবং ইতিহাস পরিবহনে চালক ও কন্ডাক্টর হিসেবে কাজ করতেন। এর আগে, সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ২টায় আহত অবস্থায় ওই দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা মারা যান।

আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এমন তথ্যই জানিয়েছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস্) আব্দুল্লাহিল কাফি। 

পুলিশ জানায়, মূলত আব্দুর রহমান স্টিয়ারিংয়ে বসে বাসটি চালাচ্ছিলেন। নিহত দুজনের একজন ছিলেন গাড়ির দরজা সোজা সড়কে, অপরজন ছিলেন গাড়ির দরজায়। আব্দুর রহমান আরেক বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তার গাড়ি আকস্মিক বাঁয়ে চাপ দেন। তখন সোহেল ও হৃদয় দুই বাসের মাঝে পড়ে গুরুতর আঘাত পান। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় আব্দুর রহমান বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান। পরে ফিরে এসে পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, তিনি ওই গাড়ির হেলপার।  

আশুলিয়া থানা পুলিশ জানায়, দুজনের মরদেহের প্রাথমিক সুরতহালে ১০-১২ জনের মারধরের কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। একজনের পিঠে একটি আঘাতের চিহ্ন এবং অপরজনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এতে সন্দেহ হয় পুলিশের। পরে হেলপার পরিচয় দেওয়া আব্দুর রহমানকে খুঁজে বের করে পুলিশ। তিনি প্রথমে একরকম ভাষ্য দিলেও সন্দেহ থেকে তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সোমবারের ঘটনার বর্ণনা দেন। এতে উঠে আসে, মূলত নিজেকে বাঁচাতে তিনি মিথ্যা গল্প সাজিয়েছিলেন।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, আব্দুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। গতকাল সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে যে বক্তব্য আব্দুর রহমান দিয়েছিলেন, তাতে আমাদের খানিকটা সন্দেহ হয়। তার বক্তব্য ছিল, ১০-১২ কিংবা ১৫ জন ব্যক্তি মিলে বাস থেকে নামিয়ে দুইজনকে পিটিয়ে আহত করে। কিন্তু প্রাথমিক সুরতহালে এমন কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করি আমরা। তদন্ত করতে গিয়ে আমরা একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাই। যিনি আমাদের জানান, এখানে দুইবাসের মাঝে চাপা খেয়ে সোহেল ও হৃদয় আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। আমাদের হাইওয়ে পুলিশের র‌্যাকার কর্মকর্তা ওই বাসটি সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে গিয়েছিলেন, তার বক্তব্যেও সেখানে মারামারির কোনো তথ্য পাইনি।

তিনি আরও বলেন, ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্ত করে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো আসলে সেদিন কী ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে আব্দুর রহমান গতকাল যা বলেছেন, তার সঙ্গে আজকের বক্তব্যের কোনো মিল নেই। ঘটনা ঘটার পর বাস থেকে লাফিয়ে তিনি পালিয়ে যান। তার গায়ে কালো শার্ট ছিল। এটি প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য। আজ তার বক্তব্যে উঠে এসেছে; তিনি মামলা, শাস্তি কিংবা জেলের ভয়ে গতকাল যাত্রীদের মারধরের গল্প সাজিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, তার যে দুইজন সঙ্গী ছিলেন, দুইজনই যেহেতু মারা গেছেন, এত ব্যস্ত সড়কে হয়তো বিষয়টি কেউ খেয়াল করবে না। বোধ হয় এভাবে বললে এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে। এটি প্রাথমিকভাবে তিনি স্বীকার করেছেন।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর