দিন মজুর আলী হোসেনের কোনো জমিজমা ছিল না। তিনি তার চাচার দেওয়া জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। অভাবের সংসারে ছিল স্ত্রী আমেনা খাতুন এবং দুই ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও আড়াই বছরের ছোট ছেলে আনাছ। তাদের এই সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো।
আর সেই অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতেই স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে খুন করে মাটিতে পুঁতে রাখে আলী হোসেন।
গতকাল বুধবার গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতেই স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় আলী হোসেন।বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) শামীম হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, দিন মজুর আলী হোসেনের কোনো জমিজমা ছিল না। তিনি তার চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছিল। অভাবের সংসারে ছিল স্ত্রী আমেনা খাতুন এবং দুই ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও ছোট ছেলে আড়াই বছরের আনাছ। সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকত। তাই আলী হোসেন বিভিন্ন সময় তার স্ত্রীর নামে এনজিও থেকে টাকা তুলত। বেশ কিছুদিন পূর্বে সে এনজিও থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হত। প্রায়ই তার ছেলে ও বৌ না খেয়ে দিন কাটাত। ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে দুই তিন মাস পূর্বেই আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেয় তার স্ত্রী ও সন্তানদ্বয়কে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আলী হোসেন গত ১৭ মে শুক্রবার রাত আনুমানিক দুইটার দিকে তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে। আমেনা খাতুন ঘুম থেকে উঠে ঘরের মেঝেতে গিয়ে বসে। এ সময় আলী হোসেন তার পিঠের পিছনে গিয়ে তার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর তার ঘুমিয়ে থাকা দুই ছেলেকেও স্ত্রীর ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে আলী হোসেন তার মৃত স্ত্রীকে কাঁধে তুলে ঘরের পিছন দিয়ে জঙ্গলে নিয়ে রাখেন এবং এর পরপরই তার দুই ছেলেকেও ওই জঙ্গলে নিয়ে আসে। তারপর ওই গ্রামের ইউসুফ ও কালামের জমির মাটিতে গর্ত করে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে পুঁতে রাখে। এর পর থেকে আলী হোসেন বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিল।
এ ঘটনায় আমেনা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন গতকাল বুধবার (২২ মে) ত্রিশাল থানায় আলী হোসেনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলা দায়েরের পর ময়মনসিংহ ডিবি পুলিশের টিম এই ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামি গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামে। এরই এক পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নিহত আমেনা খাতুনের স্বামী আলী হোসেনকে গত ২২ মে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত