১৫ জুন, ২০২৪ ১৫:৪৩

রাজধানীতে টিকে আছে পঞ্চায়েত প্রথা, সব ঘরেই পৌঁছায় কোরবানির মাংস

শামছুল হক রাসেল

রাজধানীতে টিকে আছে পঞ্চায়েত প্রথা, সব ঘরেই পৌঁছায় কোরবানির মাংস

পঞ্চায়েতের সর্দারদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। ফাইল ছবি

সামাজিক ব্যবস্থার এক অন্যতম ধারক ও বাহকের সমষ্টি ‘পঞ্চায়েত’। বাংলার ইতিহাসের মতোই অনেকটা প্রাচীন পঞ্চায়েত প্রথা। মূলত পঞ্চায়েত বলতে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত পর্ষদকে বোঝায়। যা প্রাচীনকালে গ্রাম-সংসদ অথবা পঞ্চায়েত রাজা কর্তৃক মনোনীত বা কোনো গ্রামের জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতো। গ্রাম প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পঞ্চায়েতগুলোতে সকল শ্রেণি ও বর্ণের লোকদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কালের পরিক্রমায় এখনো কিছু পঞ্চায়েত বা সেই সব সামাজিক ব্যবস্থা বিদ্যমান। যদিও আগের মতো সেইসব কার্যক্রম এখন আর সেভাবে হয় না। তবে গ্রাম্য পটভূমিতে এখনো পঞ্চায়েতের স্রোতধারা মোটামুটি বহমান।

অনেকেই হয়তো অবগত নন যে, বর্তমানে রাজধানীতেও কয়েকটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এখনো টিকে রয়েছে, যেগুলোর বয়স প্রায় ৪/৫ যুগের ওপর। বিশেষ করে রাজধানীর লালবাগ, বংশাল, রায় সাহেব বাজার, কলতাবাজার, গেন্ডারিয়া এবং যাত্রাবাড়িতে এখনো কয়েকটি পঞ্চায়েত সিস্টেম বা পদ্ধতি রয়েছে। এমনই একটি পঞ্চায়েত রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ির ‘আদর্শ পঞ্চায়েত’। বৃহত্তর যাত্রাবাড়ীতে মোট ৫টি পঞ্চায়েত রয়েছে এর মধ্যে এই আদর্শ পঞ্চায়েত একটি। সূচনালগ্ন থেকেই এ পঞ্চায়েত বিভিন্ন দাতব্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। সবচেয়ে আলোচিত যে উদ্যোগটি গত কয়েক দশক ধরে তারা করে আসছে তা হল পঞ্চায়েতের মাধ্যমে কোরবানির মাংস বণ্টন। তাহলে একটু বিস্তারিত খুলেই বলা যাক।

বর্তমানে এই পঞ্চায়েতের সদস্য বা 'ঘর' সংখ্যা হল প্রায় ২৫৫। প্রতি কোরবানির ঈদে এদের মধ্যে গড়ে ৭০/৮০ টি পরিবার কোরবানি দিয়ে থাকে। আর বাকি প্রায় দেড়শ পরিবার কোনো না কোনো কারণে কোরবানি দিতে পারেন না। ঈদের আনন্দে যেন ভাটা না পড়ে তাই তাদেরকেও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমবণ্টন করে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।

দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী আদর্শ পঞ্চায়েত ঈদগাহ মাঠে জবাইকৃত পশুর মাংস বিতরণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফাইল ছবি

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ পঞ্চায়েতের প্রধান সর্দার নজরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চায়েতের এ কার্যক্রম গত কয়েক দশক ধরে চলে আসছে এখানে। বিষয়টি আরও পরিস্কার করে বোঝার জন্য তিনি বললেন- ধরুন, এ বছর আমাদের পঞ্চায়েতের প্রায় ৭০ বা ৮০টি পরিবার পশু কোরবানি দিতে পারেন। ঈদের দিন সকালে তারা তাদের জবাইকৃত পশুর অর্ধেক পঞ্চায়েতের মাঠে দিয়ে যাবেন। আর বাকি অর্ধেক রাখবেন তাদের নিজেদের জন্য। এছাড়া সে জবাইকৃত পশুর চামড়াও পঞ্চায়েতে জমা দিবেন। এভাবে ৭০ বা ৮০টি পরিবারের অর্ধাংশ করে মাংস জমা হওয়ার পর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা কেটে ভাগ করা হবে। 

অর্থ্যাৎ পঞ্চায়েতে মাংস দেয় ৭০ বা ৮০টি পরিবার। কিন্তু ভাগ হবে পঞ্চায়েতের ২৫৫টি পরিবারের মধ্যে। এছাড়া আরেকটি বড় ভাগ দেয়া হবে গরীব ও দুস্থদের মাঝে। অর্থাৎ এ পঞ্চায়েতের বা সমাজের যিনি কোরবানি দিয়েছেন তিনিও মাংস পান এবং যিনি কোরবানি দেননি তিনিও মাংস পান। অর্থাৎ এ পঞ্চায়েতের সব ঘরেই সমপরিমাণ কোরবানির মাংস পৌঁছায়।

পঞ্চায়েতের আরেক সর্দার হাজী মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, জবাইকৃত পশুর চামড়াগুলো মাদ্রাসায় দিয়ে দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো রকম মূল্য নেওয়া হবে না। 

দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী আদর্শ পঞ্চায়েত সর্দারদের একাংশ। ফাইল ছবি

এছাড়া পঞ্চায়েতের সদস্য হতে কী করতে হয় জানতে চাইলে আরেক সর্দার হাফেজ তাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে দু’টি পদ্ধতিতে আমরা প্রাথমিক বাছাই সম্পন্ন করি। যিনি অত্র এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন অথবা বৈবাহিক সূত্রে (এলাকার জামাই হলে)। পঞ্চায়েতের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করলে প্রাথমিক যাছাই বাছাই শেষে পঞ্চায়েত সর্দাররা সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এছাড়া পঞ্চায়েতের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা সর্দাররা মতামতের মাধ্যমে নিয়ে থাকি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর