২২ জুন, ২০২৪ ১৫:৩৭

রাজশাহীতে যুবলীগের কমিটি নিয়ে বিতর্ক, এক নেতার পদ প্রত্যাখ্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে যুবলীগের কমিটি নিয়ে বিতর্ক, এক নেতার পদ প্রত্যাখ্যান

রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। দুটি কমিটিতেই একের অধিক বিতর্কিত নেতা স্থান পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে। 

উপরন্তু জেলা যুবলীগের স্থান পাওয়া একজন শীর্ষনেতাকে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। 

তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের (যুবলীগ) আরও খোঁজ খবর নিয়ে কমিটি করা উচিত ছিল। এরই মধ্যে কেন্দ্র ঘোষিত মহানগর কমিটির এক যুগ্ম সম্পাদক নতুন প্রাপ্ত পদ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। লিখিতভাবে বিষয়টি কেন্দ্রে অবগত করার পাশাপাশি ওই নেতা তার ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। 

গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে জেলা ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় ৯ মাস পর গত বৃহস্পতিবার যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক দু’টি ইউনিটের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেন। জেলায় মাহমুদ হাসান ফয়সল সজলকে সভাপতি এবং ইয়াসির আরাফাত সৈকতকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্যে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি আর মনিরুজ্জামান খান মণিরকে সভাপতি ও তৌরিদ আল মাসুদ রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের ১১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির মধ্য থেকে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিককে নতুন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। কমিটি নিয়ে প্রথম বিতর্ক প্রকাশ্যে আসে ওইদিনই রাতে নতুন এই যুগ্ম সম্পাদক ফেসবুকে নিজের অপারগতার কথা জানিয়ে পোস্ট দিলে। পোস্টে তিনি তাকে পদ দেওয়ার জন্য নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানালেও তা গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। 

জানতে চাইলে শফিকুজ্জামান শফিক দাবি করেন, তিনি কোনোদিন যুবলীগের রাজনীতি করেননি। আর ভবিষ্যতে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে চান। সে কারণেই নতুন পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। 

তবে শফিকের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সম্মেলনের আগে ঢাকা থেকে মহানগর যুবলীগের সভাপতি পদে মনোনয়ন তুলেছিলেন শফিক। কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে তৌরিদ আল মাসুদ রনিকে সাধারণ সম্পাদক করায় তিনি তার নিচের পদে থেকে রাজনীতি করতে আগ্রহী হননি। এর কারণ হিসেবে শফিকের ঘনিষ্ঠ ওই নেতারা দাবি করেন, শফিক যখন ছাত্রলীগের নেতা, তখনও রনি সংগঠনের কোনো স্তরেই ছিলেন না।

মহানগর যুবলীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক তৌরিদ আল মাসুদ রনিকে নিয়ে আছে আরও বিতর্ক। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন কি না, সে নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই। রাজশাহীর এক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তিনি একাই সিটি কর্পোরেশন থেকে শুরু করে স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঠিকাদারি কাজ করে থাকেন বলেও এর আগে সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগের অভিযোগও ওঠে গণমাধ্যমের সংবাদে। যদিও রনি বরাবরই দাবি করে এসেছেন, এসব তার প্রতিপক্ষের অপপ্রচার।

বিতর্ক আছে মহানগর যুবলীগের নতুন সাংগঠনিক সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত বাপ্পীকে নিয়েও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুবলীগের সাবেক এক নেতা জানান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক হিসেবে বহাল থাকা অবস্থায় কিভাবে তাকে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হলো, তা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। এর আগে রুয়েটে নিয়োগ বিতর্ক, জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। 

আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীর অভিযোগ, অরবিন্দ দত্ত বাপ্পী নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনে চাকরি নিয়েছিলেন। পরে স্পর্শকাতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। 

জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত সৈকতের পিতা হাবিবুর রহমান ফ্রিডম পার্টির নেতা ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি রাজশাহী-১ আসন থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দুটি জাতীয় নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির প্রার্থী ছিলেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। পরে অবশ্য তিনি রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। 

সৈকত দাবি করেন, তার বাবা মারা গেছেন। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা তার জানা নেই। তবে তিনি নিজে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করছেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন। সর্বশেষ জেলা যুবলীগের কমিটিতে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর