১৭ জুলাই, ২০২৪ ২২:০৭

‘বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করার অপচেষ্টায় নেমেছে’

অনলাইন ডেস্ক

‘বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করার অপচেষ্টায় নেমেছে’

কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত ও তাদের দোসর পঁচাত্তরের খুনি বিএনপি ভর করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে তারা সরকার পতনের আন্দোলন করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করার অপচেষ্টায় নেমেছে। এদের শক্ত হাতে দমন করে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

বুধবার বিকেল ৪টায় শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে কোটা আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র জনতার মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। মহাসমাবেশের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব’৭১। এতে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, ছাত্র, জনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে বিএনপি-জামায়াত সরকার পতনের আন্দোলন করছে। তারা সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র করছে। তথাকথিত কোটা আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ঢুকে পড়েছে। চট্টগ্রামে যুবদলের এক নেতা মারা গেছে। এতে বোঝা যায় এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে যুবদল, বিএনপি-জামায়াত। চট্টগ্রামে ফার্নিচার দোকানের আরেকজন কর্মচারী মারা গেছে। এতে প্রমাণিত হয় কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থী নেই, ভাড়াটে লোক আছে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। ১৯৭৫ সালে খুনি জিয়ার নেতৃত্বে মুসলিম লীগসহ সবাই একত্রিত হয়েছিল দেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর জন্য। খুনি জিয়া হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করেছিল। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনেছিল। এই অপশক্তি এখনো দেশে সক্রিয়।

মানিক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজাকার স্লোগান হয়। কেউ রাজাকার হলে পাকিস্তানে চলে যা। বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের বাংলায়, লালনের বাংলায় রাজাকারদের কোনো স্থান হতে পারে না।

আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি বলেন, বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিসাৎ করার অপচেষ্টায় নেমেছে। কোটা আন্দোলনে একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত ও তাদের দোসর পঁচাত্তরের খুনি বিএনপি ভর করেছে। সারাদেশের ক্যাম্পাসে শিবির ছাত্রদল তাণ্ডব চালিয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে। এদের প্রতিহত করতে হবে।

তিনি বলেন, জামায়াত শিবির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করেছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা গুলি করবে, গাড়িতে আগুন দেবে, বোমা হামলা করবে, খুন হবে-এটা কারও বিশ্বাস হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে শিবির-ছাত্রদল। মাঝখানে শিক্ষার্থীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার সঙ্গে কোনো আপস নয় জানিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, আমাদের দুঃখ হয়, বেদনা পাই, ক্ষুব্ধ হই যখন আমার তরুণ শিক্ষার্থী রাজপথে ভুল স্লোগানে নিজেকে সম্পৃক্ত করে। আত্মপরিচয়ে রাজাকার পরিচয়কে সংযুক্ত করে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মুখে এই স্লোগান কারা তুলে দেয়। এসব শত্রুদের চিহ্নিত করে মোকাবিলা করতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয়ের সঙ্গে রাজাকার শব্দ জুড়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার এই ধৃষ্টতার রাজনৈতিক পরিচয় থেকে সরে দাঁড়ান। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনার সঙ্গে কোনো আপস নয়।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, বিএনপি-জামায়াত কোটা আন্দোলনের ছেলেমেয়েদের ব্যবহার করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। বিএনপি-জামায়াত কোটা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্মম নির্যাতন করছে।

সরকারের নীরবতাকে দুর্বলতা না ভাবার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, অনেক সহ্য করেছি, আর সহ্য করবো না।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু বলেন, কোটা আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত হত্যা চালিয়ে তাণ্ডব চালানোর চেষ্টা করছে। কোটা আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। কোনো ষড়যন্ত্র কাজ হবে না। কেউ যেন নৈরাজ্য করতে না পারে, এজন্য নেতা-কর্মীরা সতর্ক আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জাহানারা আরজু বলেন, আন্দোলনে এতোগুলো প্রাণ কেন গেলো। যাদের প্রাণ গেলো, এদের প্রাণ কেন গেলো? কারণ আড়াল থেকে দুষ্ট লোকেরা দুরভিসন্ধি নিয়ে নেমেছে। স্বাধীনতা বিরোধীরা ষড়যন্ত্র করছে। কারণ দেশে-বিদেশে মানুষ মারার আকাঙ্ক্ষা তাদের শেষ হয়নি। এদের শক্ত হাতে প্রতিহত করতে হবে।

একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল (বিচ্ছু জালাল) বলেন, অস্ত্র জমা দিয়েছি ট্রেনিং জমা দেইনি। যতদিন জয় বাংলা জাগরিত থাকবে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবে আমরা গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত থাকবো। বিচ্ছু জালাল, আছে থাকবে।

গৌরব ’৭১-এর সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সঞ্চালনায় মহাসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি জামাল উদ্দীন চৌধুরী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি তানভীর শাকিল জয় এমপি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, সাবেক ছাত্রনেতা জসীমউদ্দিন ভূইয়া, জেদ্দা পারভীন রিমি, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি, যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী, গৌরব ’৭১ এর সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান রোমেল, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রূপম প্রমুখ।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর