চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেছে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ নামে একটি সংগঠন। রবিবার বেলা ১১টা থেকে তারা এমডির কার্যালয়ে অবস্থান করে। তারা এমডিকে তার কক্ষে প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় ১৭টি দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, অনিয়ম করার পরও একেএম ফজলুল্লাহ এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান হিসাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। এরপর ২০১১ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবে খাটিয়ে এমডি পদ দখল করে আছেন। ওয়াসার প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা ও বিদেশে পাচার করেছেন তিনি।
পদত্যাগের বিষয়ে ওয়াসার এমডি একেএম ফজলুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকজন এসে আমার রুমে আন্দোলন করেছে। তারা আমার পদত্যাগ দাবি করেছে। আমাকে সরকার এ পদে বসিয়েছে। সরকার যেদিন আমাকে বলবেন, আমি তখনই পদত্যাগ করব। আমি যদি আজকে পদত্যাগ করি, কাল যদি আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তার দায়ভার কে নিবে?দাবিগুলো হলো-এমডি ফজলুল্লাহ’র আয়কর বিবরণী ২০০৯-২০২৪ ও সম্পদ বিবরণী জনসম্মুখে প্রকাশ, ভ্রমণ বিল (২০০৯-২০২৪) এর পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ ও ভ্রমণ বিলকে ব্যবসায় পরিণত করায় অনতিবিলম্বে তা সরকারি কোষাগারে জমা করা, অবিলম্বে স্বৈরচারী সরকারের পোষ্যদের নিয়ে গঠিত বোর্ড বাতিল, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল ও রাজস্ব শাখাকে ঢেলে সাজানো, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ৪ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে তাণ্ডবে অংশ নেওয়া ওয়াসার কর্মচারীদের চিহ্নিত করে স্থায়ী বহিষ্কার করা, সরকার পতনের পর এমডির দেওয়া সকল অবৈধ অফিস আদেশ বাতিল, ফজলুল্লাহর সময়ে বহিষ্কৃত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা, যে সকল কর্মকর্তা প্রাধিকারের বাইরে গাড়ি ও জ্বালানি ভোগ করছেন, তা সরকারি কোষাগারে জমা করা, যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫ বছরের অধিক একই পদে কর্মরত তাদের দ্রুত বদলি করা, বিগত সরকারের আমলে সমাপ্ত ও চলমান প্রকল্পের নথি-অডিট সংক্রান্ত তথ্য ও সমস্ত ক্রয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা, চট্টগ্রাম ওয়াসা রেস্ট হাউজের বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাসের বিল (২০০৯-২০২৪) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিজ খাত থেকে পরিশোধ করা, ব্যারিস্টার কলেজ এলাকায় অবৈধ সংযোগের তদন্ত-ওয়াটার ওর্য়াকসে ভাউচারে পানি বিক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ তদন্ত প্রতিবেদনসহ ২০০৯ এর পর সংগঠিত অন্যান্য দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা, ওয়াসার প্রকল্প, রাজস্ব ও রাজস্ব শাখার দুর্নীতি প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মনিটরিং সেল চালু করা, বিক্রয় বিভাগে ১৫ বছর ধরে কর্মরত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রিচার্ড নেলসন পিনারুর অনিয়ম তদন্ত করে শান্তির ব্যবস্থা করা, ইংস লি. নামের ঠিকাদার থেকে স্মার্ট মিটার কিনে ‘পদ্মা’ নামে বিল করার রহস্য ও অনিয়ম তদন্ত করা, বিগত ১০ বছর ধরে ৩০-৩৫ শতাংশ পানি সিস্টেম লস দেখিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাতের সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা, গত ১৫ বছরে করোনাসহ নানা সংকটের মধ্যে পানির দাম বাড়িয়ে মানুষের যে কষ্ট সেটার প্রতিকার করা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই