ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রবীণ স্কাউটার, একুশেপদকপ্রাপ্ত মজিবর রহমান মাস্টার আর নেই। তিনি শনিবার সকাল ৯টায় রংপুর নগরীর গুড হেলথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
মজিবুর রহমান মাস্টারের জানাজার নামাজ তার নিজ বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে পারিবারিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার লাশ দাফন করা হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, ১৯৪৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন মজিবর রহমান। ১৯৫২ সালে দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন ভাষার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত থাকায় তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মজিবর রহমান মাস্টার শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সেই সময় তিনি বদরগঞ্জে আঞ্চলিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে যুগ্ম আহ্বায়ক ও শ্যামপুর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। মজিবর রহমান সেই সময় গ্রামে গ্রামে ঘুরে যুবক-ছাত্রদের সংগঠিত করেছেন। বদরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলার যুবক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৫ থেকে ৬’শ ছাত্রকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন তিনি। ২৮ মার্চ ঐতিহাসিক ক্যান্টনমেন্টে ঘেরাও কর্মসূচির সংগঠক ছিলেন তিনি। এরপর বাঙালি সেনা সদস্যদের নিয়ে তিনি বদরগঞ্জকে শত্রুমুক্ত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৭ মে তিনি ভারতে গিয়ে সিতাই বন্দরে মুক্তিযোদ্ধাদের রিসিপশনের কাজ করেন। এরপর সুভাষ পল্লীতে যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। সেখান থেকে তিনি সেন্ট্রাল ইয়ুথ ক্যাম্প সহকারী রিক্রুটিং, মোটিভেটর ও রিলেশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখাশোনার জন্য কুচবিহারের একটি হাসপাতালেও দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বাধীনতার পর ২০ ডিসেম্বর ভারতের ক্যাম্পের চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে মজিবর রহমান মাস্টার দেশে ফেরেন।বিডি প্রতিদিন/হিমেল