৩১ মার্চ, ২০২২ ০৯:০৪

ডায়রিয়ার বেশি রোগী শনির আখড়া ও কদমতলীর

অনলাইন ডেস্ক

ডায়রিয়ার বেশি রোগী শনির আখড়া ও কদমতলীর

আইসিডিডিআরবিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা

প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫৩ জন ব্যক্তি গতকাল বুধবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) ভর্তি হয়েছেন। আগের দিন মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৮৪৫ জন রোগী। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হন এক হাজার ৩১৭ জন রোগী। 

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি এখনো লক্ষণীয় নয়। হাসপাতালটির তথ্যানুসারে, রাজধানীর প্রায় সব এলাকা থেকে কমবেশি রোগী এলেও ডায়রিয়া আক্রান্ত সবচেয়ে বেশি রোগী আসছে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, বাসাবো, কদমতলী ও ঢাকা উত্তর সিটির দক্ষিণখান এলাকা থেকে। মিরপুর থেকেও আসছে রোগী। তবে তুলনামূলক কম। ফোটানো পানি পান না করাকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ বলছেন চিকিৎসকরা।   

বুধবার সরেজমিনে আইসিডিডিআরবিতে গিয়ে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ার রোগী আসছে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে। ওই এলাকা থেকে আসা রিকশাচালক আবদুল মজিদ তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছেন মেয়ে সাথীকে (১৫) নিয়ে। তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী এলাকায় ভাড়া করা একটি টিনশেড ঘরে তাঁর পরিবারসহ ১৫টি পরিবার বাস করে। বাড়ির মালিক ওয়াসার মূল সরবরাহ লাইন থেকে তাদের পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তবে ওয়াসার ওই পানিতে দুর্গন্ধ। সেই পানিই তাদের পান করতে হয়। গ্যাস না থাকায় পানি ফুটিয়ে পান করার সুযোগ নেই।

ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ এবং পানযোগ্য না হওয়ার পরও পান করতে হয় বলে জানিয়েছেন যাত্রাবাড়ী এলাকার আরেক বাসিন্দা শামসুল ইসলাম। ৯ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে তিনি দুই দিন ধরে ওই হাসপাতালে রয়েছেন। ১২ বছর বয়সী ছেলে আবদুল্লাহকে বুধবার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন যাত্রাবাড়ী এলাকার আরেক বাসিন্দা ইউসুফ আলী।

কদমতলী এলাকার সবজি বিক্রেতা সামিউল তার ১৩ বছর বয়সী ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন হাসপাতালে। শনির আখড়া থেকে আবদুল কুদ্দুস তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তাদের সবার এককথা, তাদের এলাকার ওয়াসার পানিতে এতটা দুর্গন্ধ যে অজু পর্যন্ত করা যায় না। তবে বাধ্য হয়ে সে পানি দিয়ে থালা-বাসন ধোয়া ও রান্নার কাজ সারছেন তারা।

ঢাকা উত্তর সিটির দক্ষিণখান এলাকার নেছার আলী (৫০), মহিতুন নেছা (২৪) ও আবুল কালাম (৬২) আশ্রয় নিয়েছেন হাসপাতালটির একই ফ্লোরে। ওয়াসার পানি নিয়ে তাদেরও একই অভিযোগ। আইসিডিডিআরবির সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. শোয়েব বিন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবছর এ সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। রাজধানীতে এটি যেন একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে এবার শুরু হয়েছে একটু আগে এবং আক্রান্তের সংখ্যাও অনেক বেশি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে রাজধানীর সব এলাকা থেকে কমবেশি রোগী এলেও সবচেয়ে বেশি আসছে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, বাসাবো, কদমতলী ও দক্ষিণখান এলাকা থেকে।’

কী কারণে এবার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেশি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ার অন্যতম প্রধান বাহন হচ্ছে পানি। দীর্ঘদিন করোনার কারণে লোকজন ঘরবন্দি ছিল। এখন স্কুল-কলেজ খোলা। লোকজনও কাজে বেরোচ্ছে। তাদের অনেকে বাইরের খোলা পানি পান করছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বৃষ্টি হলে ডায়রিয়া কমে আসবে।’ 

ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে ঘরের বাইরে গেলে ফোটানো পানি সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, ‘বর্তমানে চারদিকে যে ডায়রিয়ার প্রকোপ চলছে তার সঙ্গে ওয়াসার পানির কোনো যোগসূত্র নেই। আইসিডিডিআরবি যেসব এলাকার কথা বলেছে আমরা সেসব এলাকার পানি পরীক্ষা করিয়েছি। ওয়াসার পানি সব সময়ের মতোই আছে।’ সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর