ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়রের ইশতেহার অনুযায়ী গত দুই বছরে তাদের প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। নির্বাচিত হওয়ার আগে ঢাকা উত্তরের মেয়র ইশতেহারে ৩৮টি ও দক্ষিণের মেয়র ৫০টি প্রতিশ্রুতির ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে কোনোটার আংশিক হয়েছে, কোনোটা থমকে আছে, আবার কোনোটার মাত্র উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অল্পসংখ্যক বাস্তবায়িত হয়েছে।
গতকাল ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) অনলাইনে আয়োজিত ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দুই বছর : নাগরিক প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক নগর সংলাপে সংগঠনটির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। নগর সংলাপে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইপিডির নির্বাহী পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান। বক্তব্য দেন- আইপিডির পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম, পরিকল্পনাবিদ ড. চৌধুরী জাবের সাদেক প্রমুখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যানজট নিরসনে ডিএমপি, ডিটিসিএ, বিআরটিএ, ডিএসসিসি, পরিবহন মালিক সমিতিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি ছিল। এখানে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণীত হয়নি, তবে বাস রুট রেশনালাইজেশনের উদ্যোগ চলমান আছে, যা প্রশংসনীয়। এই উদ্যোগের গতি বাড়াতে হবে। এ ছাড়া সবার জন্য নানা সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এলাকাভিত্তিক দৃষ্টিনন্দন উন্মুক্ত পার্ক ও আধুনিক খেলার মাঠ নির্মাণ করার ঘোষণা ছিল। মেয়রদের এ উদ্যোগ চলমান আছে, তবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরও দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আর খেলার মাঠের অবৈধ দখল উচ্ছেদে উদ্যোগ নেই; সার্বজনীন প্রবেশগম্যতার সংকট রয়েছে, অনেক পার্ক-উদ্যান ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকা উত্তরের মেয়র স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা, সুনিয়ন্ত্রিত ও নারীবান্ধব গণপরিবহন নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘জনতার মুখোমুখি মেয়র’ শীর্ষক নিয়মিত মতবিনিময় করে ওয়ার্ডভিত্তিক সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এসবের বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।
আর দক্ষিণের মেয়র ইশতেহারে মাদক নির্মূলসহ এলাকাভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা কার্যকর করা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হবে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত সংস্থা। বছরের ৩৬৫ দিন, সপ্তাহের সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা নাগরিক সেবা দেওয়ার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবন খোলা থাকবে। মশকের প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস, মশক নিধন ও ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে দৈনন্দিন ভিত্তিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন, বিধি ও নীতিমালার কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ঢাকার উন্নয়ন ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সিটি করপোরেশনের কাছে দায়বদ্ধ করা হবে। বারবার রাস্তা খোঁড়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। এর মধ্যে কোনোটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আবার কোনোটার চলমান আছে।
আর বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে আইপিডির পক্ষে সিটি করপোরেশনের জন্য ১৫টি সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই বছরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন পরিকল্পনাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।