১৩ অক্টোবর, ২০২২ ১০:০৬

বর্জ্যে বিপন্ন হাতিরঝিল (ভিডিও)

► লেক পাড়ে বর্জ্যের স্তূপ ► পানিতে দুর্গন্ধ

হাসান ইমন

বর্জ্যে বিপন্ন হাতিরঝিল (ভিডিও)

রাজধানীর হাতিরঝিলে দূষণ বাড়ছে। সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে আবর্জনার আড়ালে। অতিমাত্রায় দূষিত হয়ে পড়ায় হাতিরঝিলের পানিতে এখন উৎকট গন্ধ। ওয়াটার ট্যাক্সিতে চড়তে হয় নাক চেপে। ছবি : জয়ীতা রায়

রাজধানীর হাতিরঝিল উদ্বোধনের পর একটুকরো বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়। হাঁটাহাঁটি, ঘুরে বেড়ানোর জন্য শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ছুটে আসেন এখানে। কিন্তু আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা ও ড্রেনের ময়লা পানি পড়ে দূষিত করছে হতিরঝিলের পরিবেশ। ময়লা-আবর্জনা ঝিলের পানিতে মিশে উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। ড্রেন, নালা ও স্যুয়ারেজের পানি আর ময়লা পড়ে কালচে হয়ে গেছে পানি। পানিতে ভাসছে নানা বর্জ্য। এসব কারণে শ্রী হারাচ্ছে হাতিরঝিল।

সরেজমিন হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের বাসাবাড়ির গৃহস্থালি ময়লা-আবর্জনা, দর্শনার্থীদের ফেলা বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, চানাচুর ও চিপসের প্যাকেটসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা হাতিরঝিলের লেক পাড়ে পড়ে আছে। হাতিরঝিলের চারপাশে গড়ে ওঠা দোকান ও রেস্তোরাঁর ময়লাও ফেলা হচ্ছে ঝিলের পানিতে। লেকের পানিতে ভাসছে বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা। পানির রং কোথাও কালচে, কোথাও গাঢ় নীল। এ ছাড়া পুরো হাতিরঝিলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন বর্জ্য, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। পান্থপথ, ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকা থেকে বর্জ্য ও নোংরা পানি সোনারগাঁও হোটেলের পেছনের ড্রেনসহ মোট ১১টি পয়েন্ট দিয়ে হাতিরঝিলে ঢুকে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এ পানি অনেক দিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই পানির রং কালো হয়ে বাড়ছে দুর্গন্ধ। বাতাসের সঙ্গে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ঝিলপাড় ও আশপাশ এলাকায়। ময়লা পানির ঘনত্বে ঢেউয়ে সৃষ্টি হচ্ছে সাদা ফেনা। একই চিত্র দেখা মেলে ঝিলের এফডিসি মোড়, বেগুনবাড়ী লেকপাড়, গুদারাঘাট, নিকেতন ও রামপুরা অংশে। তবে রাসায়নিক পদ্ধতিতে পানি শোধন করায় ঝিলের মূল অংশের পানির স্বচ্ছতা বজায় রয়েছে।

এফডিসি থেকে গুলশান রুটে ওয়াটার ট্যাক্সিচালক মো. সাঈদুল ইসলাম বলেন, ওষুধের কারণে পানি এখন অনেকটা ভালো। কিন্তু বর্ষায় ওষুধেও কাজ হয় না। তখন বৃষ্টির পানির সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পানি ঢুকে পুরো পরিবেশ নষ্ট করে দেয়।
ওয়াটার ট্যাক্সিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন রোকসানা কবির। তিনি বলেন, বছরের সবসময় যদি পানি স্বচ্ছ রাখা যেত, তাহলে এ পথে যাত্রী আরও বাড়ত। একই সঙ্গে ঢাকার সড়ক ব্যবস্থার ওপরও চাপ কমত। প্রথম প্রথম অনেকেই রুটটি ব্যবহার করত। কিন্তু নোংরা পানির কারণে এখন নৌপথের সম্ভাবনাও ধুঁকছে। তবে রাজউক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নান্দনিক হাতিরঝিলটি নগরে যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসন এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই তারা ঝিলটির সৌন্দর্য বা রক্ষণাবেক্ষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। অর্থ এবং জনবল সংকট থাকায় ঝিলটি ব্যবস্থাপনায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের পানি শোধন করে দুর্গন্ধমুক্ত করতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে ৪৯ কোটি টাকার ওই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় একাধিকবার। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পানির এ দুর্গন্ধ আর থাকবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এএসএম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, হাতিরঝিলকে পরিষ্কার রাখতে আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে। তারা প্রতিদিন সকালে হাতিরঝিলের সড়ক ও ফুটপাথের ময়লা পরিষ্কার করে। এটিকে সুন্দর রাখতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ ছাড়া কিছু ওয়েস্টবিন নষ্ট আছে, সেগুলো মেরামতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগির এগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, কিছু ময়লা পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখে কর্মীরা। একটা নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি এসে সেগুলো নিয়ে যায়। পানিতে দুর্গন্ধ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, পানিতে এখন উৎকট দুর্গন্ধ নেই। তবে হালকা দুর্গন্ধ থাকতে পারে। পানির দুর্গন্ধ ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করছি।

রাজউকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, হাতিরঝিলে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) লাগিয়েছি। তবে কিছু দিন আগে অনেক নষ্ট ছিল, এখন সচল করা হয়েছে। ৭২টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে এখন ৬৬টি সচল রয়েছে বলে জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর