১২ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৩:২০

আগের মতো বেচাকেনা নেই সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

আগের মতো বেচাকেনা নেই সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে

পুরোনো গৌরব হারাতে বসেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব। এখন আর আগের মতো বেচাকেনা নেই সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে। দোকানিরা সাকরাইন উপলক্ষে নানা রংবেরঙের ঘুড়ি-নাটাইয়ের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন শেষ মুহূর্তে ক্রেতাদের আশায়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, নারিন্দা, ধোলাইখাল, ধুপখোলা, গেন্ডারিয়াসহ প্রতিটি অলি গলিতে নানা রংয়ের ঘুড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার সমাগম নেই। পুরোনো দিনের জৌলুস হারিয়েছে সাকরাইনের ঘুড়ি উৎসব। 

এদিকে দোকানগুলোতে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। এরমধ্যে ভোয়াদার, চক্ষুদার, দাবাদার, রুমালদার, চিলদার, রকেট, স্টার, টেক্কা, শিংদ্বার, রংধনু, গুরুদারসহ রয়েছে অসংখ্য ঘুড়ি। আকারভেদে একেকটা ঘুড়ির সর্বনিম্ন দাম ৫, ১০, ২০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত। ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নাটাই। যার সর্বনিম্ন দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং সুতার দাম হাঁকানো হচ্ছে মান ভেদে ৫০ থেকে থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

শাঁখারিবাজারে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পান-সিগারেটের ব্যবসা করেন স্বপন সাহা। কিন্তু বছরের এ সময়ে তিনি পান-সিগারেটের ব্যবসা পাল্টে দোকানে ঘুড়ি, নাটাই, সুতা বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করেন। তবে এ বছরের চিত্রটা সম্পন্ন ভিন্ন। আগের মতো বেচাকেনা নেই ঘুড়ি উৎসবে তার দোকানে।

স্বপন সাহা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে কখনও এমনটা হয়নি। এবারে বেচাকেনা খুবই কম। সাকরাইন আসলে আগে ঘুড়ি বেচাকেনায় ধুম পড়ে যেতো শাঁখারি বাজারসহ পুরো পুরান ঢাকাতে। পুরান ঢাকার মানুষেরা কেমন জানি বদলে গেছে। আশা করছি শুক্রবারে ভালো বেচাকেনা হবে। 

পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল শাহ বলেন, মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব কমে গেছে আগের তুলনায় এবং প্রশাসনিক জটিলতায় তরুণেরা সাকরাইন উৎসবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়াও, আধুনিক যুগের ডিজে পার্টি এবং আতশবাজির কারণে ঘুড়ি উৎসব তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়েছে। 

উল্লেখ্য, সাকরাইন মূলত পৌষসংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব। বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদযাপনে ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। সংস্কৃত শব্দ 'সংক্রান্তি' ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসেবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রংবেরঙের ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এক কথায় বলা যায় সাকরাইন হচ্ছে এক ধরনের ঘুড়ি উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার নবমতম মাস, 'পৌষ মাসের শেষ দিনে আয়োজিত হয় যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিকার হিসেবে জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে।'

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর