৬ এপ্রিল, ২০২৩ ১৭:২৯

ভুয়া ডাক্তার-নার্স সেজে বাসা-বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির হোতারা গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক

ভুয়া ডাক্তার-নার্স সেজে বাসা-বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির হোতারা গ্রেফতার

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর গুলশান-১ এর একটি বাসা থেকে মাত্র ৩-৪ মিনিটের ব্যবধানে একটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন চুরির দুর্ধর্ষ ঘটনা ঘটেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ তল্লাশি করে দেখা যায় ডাক্তার ও নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক এবং গলায় ভুয়া আইডি কার্ড পরা এক তরুণী ওই বাসায় প্রবেশ করেছিলেন। তরুণীর পরিচয় সম্পর্কে বাসার দারোয়ান জানান, ওই তরুণী নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। বলেছিলেন তিনি ফিজিও থেরাপিস্ট। ভবনের সাতলায় জাহেদুল ইসলামের মা অসুস্থ। তাকে থেরাপি দেওয়ার জন্য এসেছেন। এ পরিচয় দেওয়ার পর দারোয়ান তাকে বাসায় প্রবেশের অনুমতি দেন।

চুরির এ ঘটনায় কালক্ষেপণ না করে গুলশান মডেল থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী জাহেদুল। পরে মামলাও দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে গুলশান থানা পুলিশ জানতে পারে অভিজাত পাড়ায় এই চুরির ঘটনার লোমহর্ষক বিবরণ। এরপর গুলশান থানাধীন ২ নম্বর পুলিশ চেকপোস্টের সামনে থেকে কথিত চিকিৎসক নামে চোরচক্রের হোতা আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমকে (২২) গ্রেফতার করে পুলিশ।

ডিএমপির গুলশান বিভাগ পুলিশ জানায়, ডাক্তার ও নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক এবং গলায় ভুয়া আইডি কার্ড পরে অভিজাত পাড়ায় এভাবেই অভিনব কায়দায় বিভিন্ন সময় চুরি করে আসছিলেন মিম। মূলত ভুয়া চিকিৎসকের বেশ ধরে বাসায় ঢুকে চুরি করতেন তিনি। তার নামে গুলশান থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৪টি মামলা এবং দু’টিতে সাজা পরোয়ানা রয়েছে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়ার পর কথিত চিকিৎসক আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিমসহ সংঘবদ্ধ চোরচক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে গুলশান থানা পুলিশ।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে চোরাই ছয়টি ল্যাপটপ, ১০টি মোবাইল ফোন ও দুটি ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার অন্যরা হলেন তন্ময় বিশ্বাস (৩০), স্বপন শেখ (৪৫), নুরুল ইসলাম (২৭), কলিম উদ্দিন কালু ওরফে কলিউল্লাহ (৪০) ও মোখলেছুর রহমান (৫১)। ডাক্তার-নার্সের অ্যাপ্রোন পরে দুর্ধর্ষ চুরি করতেন মিম-তন্ময়রা

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. আ. আহাদ। তিনি বলেন, আমরা একটি চুরির তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনার তথ্য পাই। চোরচক্রের হোতা মিম খুবই ধূর্ত। তার এসব অপকর্মের প্রধান সহযোগী গ্রেফতার বয়ফ্রেন্ড তন্ময়।

ডিসি আ. আহাদ আরও বলেন, কোনো বাসায় চুরির আগে রেকি করে চোরচক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে খোঁজ রাখে কোন বাসায় অসুস্থ ও বৃদ্ধ বাসিন্দা আছেন, কোন বাসায় কখন মানুষ কম থাকে, কখন কারা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যান। সকাল সময়টা চুরির জন্য টার্গেট করে তারা। রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকাগুলো তাদের প্রধান টার্গেট। এসব এলাকায় এমনও দিন গেছে একাধিক চুরি সংঘটিত করেছে চক্রটি।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা সবাই সংঘবদ্ধ চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য। মূলহোতা মিম চক্রের যোগসাজশে কখনো ডাক্তার কখনো নার্স পরিচয় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যে ফাঁকা বাসা বা অসুস্থ বাসিন্দার উপস্থিতিতে মোবাইল ল্যাপটপ নিয়ে সটকে পড়েন।

আ. আহাদ বলেন, বাসায় প্রবেশের আগে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে চোরচক্র। সেসব তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে নিজেদের পরিচয় দেয়। নারী চিকিৎসক বা নার্স পরিচয় দেওয়া, ডাক্তার বা নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক এবং গলায় আইডি কার্ড পরা দেখে অনেক বাসার দারোয়ান তাদের কমই সন্দেহ করেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দিনের পর দিন বিভিন্ন বাসায় চুরি করে আসছিল চক্রটি।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর