২৮ জুন, ২০২৩ ১৩:৩৪

বৃষ্টির বাগড়ায় ঈদ আনন্দযাত্রায় পথে পথে ভোগান্তি

সাভার প্রতিনিধি

বৃষ্টির বাগড়ায় ঈদ আনন্দযাত্রায় পথে পথে ভোগান্তি

ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

ঈদের একদিন আগে বুধবার (২৮ জুন) সকালটা ছিল মেঘাচ্ছন্ন। কোথাও কোথাও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। সবিছু উপেক্ষা করেই রাজধানী ঢাকা ছেড়ে নাড়ির টানে গ্রামের বাড়ির পথে লাখ লাখ মানুষ। নির্দিষ্ট দূরত্বের পর গাড়ি বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন অনেকেই। হঠাৎ কালো মেঘে ছেয়ে যায় আকাশ। শুরু হয় ঝড়ো হাওয়াসহ তুমুল বৃষ্টি।

যে যেখানে পারেন আশ্রয় খুঁজে নেন, কেউ কেউ ভিজেই রওনা হন গন্তব্যে। বৃষ্টির এই হয়রানিতেও পরস্পরের সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখেই সবাই বলেছেন- ঈদ মোবারক। থেমে থেমে বৃষ্টি তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে, যার ফলে ঈদ আনন্দযাত্রায় সঙ্গী হয়েছে ভোগান্তি। চাহিদার তুলনায় রাস্তায় গাড়ি কম, বাড়তি ভাড়া আদায়, যানজট ও বৃষ্টির কারণে পথে পথে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে বাস না পেয়ে ঢাকায়ই কয়েক ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছে অনেক যাত্রীর। এছাড়া দূরপাল্লার সড়কেও ছিল যানজট। বেশি ভোগান্তিতে পড়েন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। এই বৃষ্টিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রায় কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। একই অবস্থা হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কেও। 

গাবতলী থেকে সাভারের সড়কেও থেমে থেমে গাড়ি চলে। এছাড়া প্রতিটি বাসের ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ যাত্রী ঠাসাঠাসি করে গন্তব্য গেছেন। ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি গেলেও সড়ক পথের যাত্রীদের মধ্যে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগের উচ্ছ্বাস ছিল। বুধবার সকালে সাভারে নবীনগরে সরেজমিন এসব চিত্র দেখা গেছে। 

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে সড়কপথে বাড়ি ফেরার জন্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যেসব যাত্রী বাইপাইল নবীনগর এসেছেন, তাদের দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। একই ধরনের চিত্র ছিল চন্দ্রা। গাবতলী পশুর হাটের কারণে ঢাকায় গাড়ি ঢুকতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। ফিরতি বাস দেরিতে আসায় প্রায় সব কোম্পানির বাসের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়। টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী পার হতেই এক ঘণ্টার বেশি লেগেছে। 

সাভারে পোশাক কারখানার শ্রমিক পারুল সকাল সাড়ে ৭টায় হানিফ পরিবহণের সাভারে বাস কাউন্টারে আসেন। বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তার বাস আসেনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাড়ি কখন আসবে, তা কেউ বলছে না। শুধু বলছে, অপেক্ষা করেন আসবে। জানতে চাইলে হানিফ পরিবহণের সাভারে কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা রমিজ বলেন, খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলে যে বাসগুলো যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে, সেগুলো ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে। বিশেষ করে চন্দ্রা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসগুলো আটকে থাকছে। 

গাবতলী টার্মিনালের পরিবহণ শ্রমিকরা বলেন , চন্দ্রা, নবীনগর, হেমায়েতপুর ও আমিনবাজারের যানজটের কারণে ঢাকায় ফেরা বাস নির্ধারিত সময়ে আসতে পারছে না। এর সঙ্গে বাধ সেধেছে বৃষ্টি। এজন্য বেশির ভাগ বাস কোম্পানি শিডিউল রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। 

গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া হানিফ পরিবহণের ম্যানেজার হুমায়ুন কবির বলেন নাটর, কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলমুখী বাসগুলো ছাড়তে এক থেকে দুই ঘণ্টা দেরি হয়েছে। এজন্য তাদের বাড়তি গাড়ি দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পাঠাচ্ছেন তারা। এদিকে বাস না পেয়ে বিকল্প পথে গেছেন অনেক মানুষ। 

আমিনবাজার থেকে ট্রাকে চড়েই বগুড়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেন ফাতেমা। তার সঙ্গে ছিলেন ২মাসে শিশু। সে আশুলিয়ার গার্মেন্টে চাকরি করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে চড়ে যাওয়ার বিষয়ে ফাতেমা বলেন, গার্মেন্টস ছুটির পরই তারা গাবতলী এসেছেন। কিন্তু বাস পাচ্ছেন না। যেসব বাস পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোয় ১৩০০-১৫০০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। অথচ অন্য সময়ের ভাড়া ৫৫০ টাকা। 

তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ আছে; কিন্তু বাস কই? তার ওপর বাড়তি ভাড়া। তাই ট্রাকে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে বাড়ি যাচ্ছি। কষ্ট হলেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে পারবেন, তাই খুশি লাগছে বলেও জানান তিনি। 

পরিবহণ মালিক সমিতি সভাপতি হাজী আব্বাস উদ্দিন বলেন ঈদুল ফিতরে স্বস্তিতেই যাত্রীরা বাড়ি গিয়েছিলেন। কিন্তু এবার ঈদুল আজহায় সড়ক-মহসাড়কে ভিন্নচিত্র। গার্মেন্টস, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি অফিস ছুটি হয়েছে। ছুটির পরই সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, একই সঙ্গে লাখ লাখ শ্রমিক বাড়ির উদ্দেশে যেতে রাস্তায় নেমেছে। পাশাপাশি সড়কে বিশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে অনেক বাস যাত্রী তুলেছে। এসব কারণে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোয় যানজট তৈরি হয়। সকাল থেকে কয়েক দফা বৃষ্টি হচ্ছে। এসব কারণে সড়কপথে যানজট তৈরি হয়। 

তিনি আরও বলেন, গাড়ির সংকট পুঁজি করে বিভিন্ন রুটে ১০০-৪০০ টাকা বাড়তি ভাড়াও আদায় করা হয়। বাড়তি ভাড়া এড়াতে ট্রাক, পিকআপে চড়েও বিভিন্ন জেলায় গেছেন ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় প্রায় ৫ কিলোমিটার থেমে থেমে যানজট ছিল। এছাড়া কারখানাগুলো ছুটি হওয়ায় শ্রমিকরা একসঙ্গে বাড়ি যাওয়ার কারণে এ যানজটের তীব্রতা আরও বেড়ে যাচ্ছে। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সাভার হাইওয়ে থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, একসঙ্গে যাত্রী এবং যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সড়কে থেমে থেমে ধীরগতিতে গাড়ি চলছে। তবে এটা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তাছাড়া সড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। 


বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর