শিরোনাম
সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

সংকট নিরসনে হোসেন জিল্লুরের নয়া উদ্যোগ

সংকট নিরসনে হোসেন জিল্লুরের নয়া উদ্যোগ

চরম রাজনৈতিক সংকটে দেশ আজ গিরিখাদের কিনারায়। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মিশন এখনো তৎপর সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের। কিন্তু দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল নিজেদের দাবির প্রতি অটল থাকায় চরম সংঘাতময় মুহূর্তে সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা, খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি 'দেশ শান্তি চায়' শীর্ষক রাজনৈতিক সংকট নিয়ে নাগরিক আলোচনা সভার আয়োজন করবেন। 'কতিপয় নাগরিকদের' ব্যানারে আগামী ১৩ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করবেন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। উপস্থিত থাকবেন ড. আকবর আলি খান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, হাসান আরিফ, রোকেয়া আফজাল রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদের, সালেহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার শাহদীন মালিক, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, ব্রিগে. জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ।

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দেশের রাজনৈতিক এ সংকটকালে একজন নাগরিক হিসেবে আমরা নীরব থাকতে পারি না। নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে জাতিকে সংকট থেকে উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছি।

কারণ নাগরিক হিসেবে আমরাও চাই এদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক। আমরা আর অশান্তি চাই না। তাই আমাদের আয়োজনের শিরোনামও দেওয়া হয়েছে 'দেশ শান্তি চায়'।

জানা যায়, আলোচনা সভায় সংকট নিরসনের চারটি সুনির্দিষ্ট দাবি ও করণীয় ঘোষণা করা হবে। এগুলো হলো, ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি অবিলম্বে প্রত্যাহার ও মৌলিক অধিকার দিয়ে সংরক্ষিত সব রাজনৈতিক ও নাগরিক কর্মসূচি পালনে নিশ্চয়তা, সব দলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল অবিলম্বে স্থগিত করা ও যথাসময়ে পুনর্নির্ধারণ করা, নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় সব দলের সমান সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ প্রয়োজনীয় সব কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ দৃশ্যমান করা ও রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক কাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে নাগরিক ও রাজনীতিবিদদের যৌথ অংশগ্রহণে সাংবিধানিক সংস্কারবিষয়ক জাতীয় আলোচনা এবং এ বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা চুক্তি সম্পাদন করা।

জানা যায়, দেশীয় সমস্যা নিরসনে বিদেশি মিশনগুলোর তৎপরতা গত এক বছর আগে থেকেই চলে আসছে। গত মে মাসে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দুই নেত্রীকে উদ্যোগ নিতে চিঠি দেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন। ওই চিঠি জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো দুই নেত্রীর কাছে পৌঁছে দেন। তখন বান কি-মুন ফোনে দুই নেত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন। এরপর ফের উদ্বেগ জানিয়ে গত ২৫ নভেম্বর দুই নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠান তিনি। বরাবরই তিনি প্রধানমন্ত্রীকে 'অংশগ্রহণমূলক', 'বিশ্বাসযোগ্য' ও 'সহিংসতামুক্ত' নির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন।

এর আগে গত ১৭ নভেম্বর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশে সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় 'সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।'

গত ৩০ নভেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ক্যাথরিন অ্যাশটন এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়ে বলেছেন, 'রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশে ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি।'

গত ১ ডিসেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) নাভি পিল্লাই 'দেশকে চরম বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয় এমন নীতি বন্ধ করার দাবিতে' বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে একটি বিবৃতি দেন।

গত ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য তাদের পক্ষ থেকে রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গত ৪ ডিসেম্বর ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এদিন ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত হিদার ক্রুডেন ও মার্কিন দূতাবাস পৃথক বিবৃতিতে 'নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকট সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তবে বিদেশিদের নানা দৌড়ঝাঁপ থাকলেও দেশীয় বিশিষ্ট নাগরিকদের উল্লেখযোগ্য তৎপরতা দেখা যায়নি। কেবল গত ২৬ নভেম্বর পরিস্থিতি নিরসনে দেশের ছয় বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করলে তিনি 'সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে সংকট সমাধানের আশ্বাস দেন।' এরপর আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। দ্বিতীয়বারের মতো ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের এই নাগরিক উদ্যোগ অনেকের কাছে আশার সঞ্চার করেছে বলে জানা যায়।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর