সিলেট নগরীর সবচেয়ে বড় খাল 'গাভিয়ার খাল'। নগরীর তিন ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খাল। একসময় এ খাল দিয়ে চলত বড় বড় নৌকা। মহাজনি আর নায়রি নৌকা (নববধূদের বাপের বাড়ি যাতায়াতে ব্যবহৃত নৌকা) ঢেউ তুলত গাভিয়ার খালে। কালের আবর্তে হারিয়েছে নৌকার যুগ, সেই সঙ্গে গাভিয়ার খালও। ৫০ ফুট প্রশস্ত খালটির অস্তিত্বই হারিয়ে গিয়েছিল প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শেষ পর্যন্ত খালটি উদ্ধার ও খননের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে চলছে খননকাজ। গতকাল গাভিয়ার খালের উদ্ধার হওয়া অংশে স্পিডবোট ভাসান সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। স্পিডবোটে সাংবাদিকদের নিয়ে ঘুরে দেখেন খালের উদ্ধার কার্যক্রম।
সিলেট নগরীর কুয়ারপাড় পয়েন্ট থেকে উৎপত্তি গাভিয়ার খালের। নগরীর ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কানিশাইল হয়ে সুরমা নদীতে পড়েছে খালটি। দীর্ঘদিন থেকে প্রভাবশালীরা খালটি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে। শুধু স্থাপনাই নয়, খালটি দখল করে খেলার মাঠও তৈরি করা হয়েছিল। খালটি অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এ তিন ওয়ার্ডের লোকজনকে পোহাতে হতো মারাত্দক দুর্ভোগ। পুরো বর্ষা মৌসুমই তাদের থাকতে হতো পানিবন্দী। ভুক্তভোগী মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে দুই সপ্তাহ আগে গাভিয়ার খাল উদ্ধারে নামে সিটি করপোরেশন। ভেঙে ফেলা হয় খালের ওপর নির্মিত ১৩৫টি অবৈধ স্থাপনা। সীমানা নির্ধারণের পর কয়েক দিন ধরে শুরু হয়েছে খাল খননের কাজ। এঙ্েেভটর দিয়ে চলছে রাত-দিন খাল খনন। খননকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে খালটি। গতকাল দুপুরে সিলেটে কর্মরত সাংবাদিকদের নিয়ে গাভিয়ার খাল উদ্ধার ও খননকাজ পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র। খননকাজ পরিদর্শন শেষে তিনি খালে ভাসান চারটি স্পিডবোট। সাংবাদিকদের নিয়ে ঘুরে দেখেন উদ্ধারকাজ।
সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গাভিয়ার খাল উদ্ধার হবে, পানিতে নৌকা ভাসবে এটা মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল। অবৈধ দখলের কারণে খালটির অস্তিত্বই হারিয়ে গিয়েছিল। যে কোনো মূল্যে আমরা পুরো খালটি উদ্ধার করে দুই পাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করব। খাল উদ্ধার ও খননকাজে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। পরে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হবে। খালটি উদ্ধার হওয়ার পর নগরীর জলাবদ্ধতা অনেক কমে আসবে বলে দাবি করেন তিনি।