শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজে ধীরগতি

কাজ হয়েছে ২৫ শতাংশ বেড়েছে যানজট, দুর্ভোগ

মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজে ধীরগতি

ধীরগতিতে চলছে রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজ। ফলে এ সড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত যানজটে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বাদ পড়ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারাও। গত ১৫ মাসে কাজ হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যে উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। অথচ এখনো প্রকল্পের পুরো নকশাই চূড়ান্ত হয়নি। নকশা সংশোধনের এ জটিলতায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নির্মাণ কাজ। ফলে বাড়ছে প্রকল্পের সময় ও ব্যয়। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়ও প্রায় তিন বছর বৃদ্ধি করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাপ দিচ্ছে সরকারকে।

এলজিইডির দেওয়া তথ্যমতে, চার লেনবিশিষ্ট এ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার। নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়ছে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) ও ১৯৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে। অবশিষ্ট ২০০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব ফান্ড থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যেই এর নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়ক প্রকল্পের পরিচালক নাজমুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'প্রকল্প ব্যয় বাড়লেও কত হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ জন্য কমিটি রয়েছে, তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন। প্রকল্পের নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব চূড়ান্ত করে মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে। এ ছাড়া বিদেশি দাতাদের অনুমোদনেরও প্রয়োজন হবে।'

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর যানজট নিরসনে মগবাজার-মৌচাক (সমন্বিত) উড়ালসড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরুর পর পরই প্রকল্প এলাকা ও আশপাশের ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন পরিসেবা সংযোগ লাইনের কারণে উড়ালসড়কের পাইলিংয়ের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। এসব পরিসেবা সংযোগ লাইন অপসারণে সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো লাভ হয়নি। এ ছাড়া প্রকল্প এলাকার সড়ক খুব ব্যস্ত ও অপ্রশস্ত হওয়ায় সংযোগ লাইনগুলো অপসারণ বেশ জটিল। ফলে বাধ্য হয়ে নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দেশি-বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের দুটি প্যাকেজের (ডবি্লউ-৫ ও ডবি্লউ-৬) কাজ করছে চীনের মেটালারজিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন্স। অন্য প্যাকেজের (ডবি্লউ-৪) কাজ করছে ভারতের সিমপ্লেঙ্ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও দেশীয় নাভানা কনস্ট্রাকশন। তবে নকশা সংশোধনের কারণে উভয় প্রতিষ্ঠানই প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে এলজিইডির কাছে চিঠি দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এলজিইডির অন্য একটি সূত্র জানায়, উড়ালসড়কের ডবি্লউ-৪ প্যাকেজের আওতায় তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে শুরু হয়ে এফডিসি মোড়, মগবাজার রেলক্রসিং, চৌরাস্তা হয়ে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের কাছে নেমে যাবে উড়ালসড়কটি। ডবি্লউ-৫ প্যাকেজ রামপুরা রোড থেকে মৌচাক হয়ে শান্তিনগর গিয়ে শেষ হবে। আর ডবি্লউ-৬ প্যাকেজে বাংলামোটর থেকে মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে গিয়ে শেষ হবে। উড়ালসড়কে ওঠানামার জন্য আটটি লুপ থাকবে। জানতে চাইলে তমা কনস্ট্রাকশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এত বড় প্রকল্পের কাজ এভাবে চলতে পারে না। একটি প্যাকেজের কাজ চললেও মাটি খুঁড়ে পরিসেবা সংযোগ লাইনের অবস্থান দেখে পাইল করতে হচ্ছে। সংশোধিত নকশা না পাওয়ায় আরেক প্যাকেজের কাজ ফেলে রাখা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর