শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা
গোলটেবিলে বক্তারা

পেশাজীবীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার মূলে 'নোংরা রাজনীতি'

পেশাজীবীদের অতিরাজনীতির কারণেই পরস্পর সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। অতিরাজনীতির কারণেই চিকিৎসক, রোগী ও সাংবাদিকদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া নিজ নিজ পেশায় দায়িত্বশীলতারও অভাব রয়েছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংগঠন পুনর্জাগরণে বাংলাদেশ আয়োজিত 'হাসপাতালে সৃষ্ট অস্থিরতা : চিকিৎসক-রোগী-সাংবাদিক সম্পর্কের অবনতি, সমাধান কোন পথে?' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে সাংবাদিক ও চিকিৎসা পেশার প্রতিনিধিরা ঐকমত্য প্রকাশ করে বলেন, সব পেশায় নোংরা রাজনীতির কারণে সবসময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। পুনর্জাগরণে বাংলাদেশের সভাপতি প্রকৌশলী মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. রশীদি মাহবুব বলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রীই বলেন চিকিৎসকরা গ্রামে থাকতে চান না। এতে চিকিৎসকদের সম্পর্কে জনগণের ধারণা আরও খারাপ হচ্ছে। জনগণ আস্থা হারাচ্ছে। এখন চিকিৎসকদের মধ্যে রাজনৈতিক দুটি গ্রুপ রয়েছে। যখন যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে তখন সে দলের সমর্থক গ্রুপটি শক্তিশালী থাকে। চাইলেও এ গ্রুপের চিকিৎসকদের গ্রামে পোস্টিং দেওয়া যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশনও নিতে পারবেন না। কারণ তারা রাজনীতি করেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ বলেন, এখন চিকিৎসক ও সাংবাদিকরা রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মতো লাঠিয়ালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা বা ডাক্তারি করতে এসে যদি মাস্তানি-চাঁদাবাজি করতে হয় তাহলে এ পেশায় থাকতে হবে কেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্য অংশের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, বাংলাদেশে খালেদা-হাসিনার বাইরে নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আজকে এক পেশার মানুষ চার ভাগে বিভক্ত। কোন কারণে আমরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজেদের পেশার প্রতি অবহেলা করছি। আমাদের উচিত হবে রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গা রেখে নিজ নিজ পেশায় দায়িত্বশীল হওয়া। সাংবাদিক নেতা আবদুল আজিজ বলেন, দেশের প্রতিটি পেশায় কাজ করতে গেলে একটি সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন। তাদের নিয়োগের একটি নির্দিষ্ট নিয়মও রয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা এখানে নিয়োগ প্রক্রিয়া ভিন্ন। এ পেশায় অনেক দুর্বলতা রয়েছে। তবে চিকিৎসকরা তো এমবিবিএস পাস করে পেশায় আসেন। তাদের হাতে কেন সাংবাদিকরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হবেন। এ পর্যন্ত যতগুলো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সাংবাদিকরা ডাক্তারদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডা. রকিবুল ইসলাম বলেন, আর্থ-সামাজিক অবস্থান ও মনোজগতের পরিবর্তনের কারণে চিকিৎসক-রোগী ও সাংবাদিকদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। বর্তমানে চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থার অনেক সমস্যা রয়েছে।

এসব বিষয় সমাধানের জন্য অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নজর দিতে হবে। যখন যারা ক্ষমতায় থাকছে তখন তাদের সংগঠনগুলো একটু বেশি আগ বাড়িয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে। 'নিজেরা করি' সংগঠনের চেয়ারম্যান খুশি কবির বলেন, চিকিৎসক-সাংবাদিকদের মধ্যে যা ঘটেছে তা নতুন নয়। তবে ঘটনাগুলো এখন অনেক বেশি ঘটছে। এর কারণ আমাদের ধৈর্য অনেক কমে গেছে। সামাজিক অস্থিরতার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আলোচনা সভায় সব বক্তা-ই এ সমস্যা সমাধানে অতিরাজনীতি পরিহার করে পেশার প্রতি নিষ্ঠাবান হওয়ার আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর