সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

দেড় বছরের শিশুটি কি জানে মা দগ্ধ

দেড় বছরের শিশুটি কি জানে মা দগ্ধ

অসুস্থ মা। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাই তো ছেলে আবু বকর দেশের এই ‘অরাজকতা’র মধ্যেও মাকে নিয়ে পাবনা থেকে গত শনিবার ঢাকার পথে রওনা দেন। তার সঙ্গে ছিল বৃদ্ধ বাবা আবু তাহের ফকির (৭৫) ও ছোট ভাই সুজন (২২)। ভালোভাবেই তাদের বাস ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনালে পৌঁছে। কিন্তু এই সুখ তার সয়নি। গাবতলী থেকে ভাড়া বাসা কামরাঙ্গীরচরে যেতে ফের পরিজন নিয়ে একটি লোকাল বাসে চড়েন। বাসটি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের কাছে পৌঁছালে বাসের মধ্যে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে একদল দুর্বৃত্ত। সঙ্গে সঙ্গে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। চালক চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে নিচে পড়েন। পেছনেই বসা ছিলেন আবু বকর। তিনিও পেশায় একজন চালক। বাসচালককে লাফিয়ে পড়তে দেখে তিনি গিয়ে চালকের আসনে বসেন। ব্রেক চেপে বাসটি থামিয়ে দেন। তারপর বৃদ্ধ মাকে কোলে নিয়ে লাফিয়ে পড়েন। কিন্তু ততক্ষণে বকরের বৃদ্ধ বাবার শরীর ঝলসে যায়। লাফিয়ে পড়ে পা ভাঙে তার ছোট ভাই সুজনের। দগ্ধ হয়েছেন আবু বকর (৩০) নিজেও। একই পরিবারের এ চারজনের এখন ঠাঁই মিলেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর বার্ন ইউনিটে। গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) ২ নম্বর বেডে ভর্তি বৃদ্ধ আবু তাহের ফকির। স্যালাইন চলছে। চলছে অক্সিজেনও। দগ্ধ বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে কান্না করছেন মেয়ে মর্জিনা বেগম। রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা তাদের দেখতে গেলে মর্জিনা আক্ষেপ করে বলতে থাকেন, ‘আমরা তো কোনো রাজনীতি করি না। কেন আমার বাবাকে পেট্রলবোমা দিয়ে  পোড়ানো হলো। কেন আমার ভাই পুড়ে গেল। কেন আমার ভাইয়ের পা ভাঙল। আমরা নিরীহ মানুষ হয়ে কেন কষ্ট পাব। আমি এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই।’ আবু তাহের ফকিরের পাশের বেডেই ছেলে আবু বকরের বেড।
 

সর্বশেষ খবর