সোমবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা

ড. কামালের জাতীয় সংলাপের ডাক

ড. কামালের জাতীয় সংলাপের ডাক

রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা এবং চলমান সংকট নিরসনে জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৫ নেতা। আজ সোমবার জাতীয় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

তারা বলেন,  মানুষ হত্যা করে, দেখামাত্র গুলি করে সমস্যা সমাধান হবে না। এ জন্য প্রয়োজন জাতীয় সংলাপ। এ সংলাপ হতে হবে জনগণ যে সংবিধানের মালিক, ৫ বছর পর পর জাতীয় নির্বাচনে যেন নতুন করে সংকট তৈরি না সেজন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থার। বক্তারা আরও বলেন, আন্দোলনের পুড়িয়ে মানুষ হত্যা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দিতে হবে।

‘সভা সমাবেশসহ গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত, জানমাল রক্ষা, সহিংসতা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে কমিউনিস্ট পার্টি ও বাসদ। একই স্থানে আলাদা ভাবে কর্মসূচি নিলেও এক মঞ্চে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্যের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য একদল প্রকাশ্যে গুলির নির্দেশ দিচ্ছে অপরদিকে অন্য দল ক্ষমতায় আসার জন্য পেট্রল বোমা হামলা এবং নাশকতা করছে। এই সংকটময় পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন।

সরকারের উদ্দেশ্যে ড. কামাল বলেন, সংবিধান রক্ষার কথা বলে আপনারা নির্বাচন করেছেন কিন্তু নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময় আপনাদের বিভিন্ন মন্ত্রী বলেছেন আমরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকব। যে সংবিধানের কথা বলে আপনারা নির্বাচন করেছেন সেই সংবিধান আপনারা নিজেরাই ভুলে গেছেন। তিনি বলেন, সংবিধানে বলা আছে যখন প্রয়োজন তখনই নির্বাচন দেয়া হবে। কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতিই ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। দেশের জনগণ এখন নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, দেখামাত্রই গুলি করার যে নির্দেশ দিয়েছেন তা সাংবিধানিক আদেশ হতে পারে না। যে পুলিশ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের  সময় যুদ্ধ করেছে সেই পুলিশ বাহিনীই জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে পুলিশি অবস্থান কুশাসনের ফলে সৃষ্টি হয়। এ সরকারের প্রতি জনসমর্থন নেই। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।

ড. কামাল বলেন, আমরা ঐক্যের প্রয়োজনে জাতীয় সংলাপ চাই। আওয়ামী লীগ কতদিন ক্ষমতায় থাকবে না বিএনপি থাকবে সে জন্য নয়, জনগণ যে ক্ষমতার মালিক, ৫ বছর পর পর যেন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকট সৃষ্টি না হয় সে জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা।

জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, সারা দেশ  থেকে আজ ঢাকা বিচ্ছিন্ন। এইভাবে দেশ চলতে পারে না। রাজাকার যেমন কখনো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না তেমনিভাবে আওয়ামী লীগ আর কখনো গণতান্ত্রিক দল হতে পারবে না। সভা-সমাবেশ করার অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার। এগুলো ইয়াহিয়া, আইয়ুব বন্ধ করতে পারেনি। এ সরকারও পারবে না। এ জন্য একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা বন্ধ করতে হবে। এখন চলমান সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় জাতীয় সংলাপ। সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসনে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।

দেশে যে সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের, এমন মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সংকটময় পরিস্থিতি ৭ দিনের মধ্যে নিরসন না হলে আপনারা দয়া করে পদত্যাগ করুন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে আপনেরা বৈধতা পাননি। নির্বাচনের প্রহসন হয়েছে। রাজনৈতিক সমস্যা তৈরি হয়েছে, এ জন্য রাজনৈতিক সংলাপ ডাকুন। দুই নেত্রীর উদ্দেশে মান্না বলেন, আপনেরা এখন কেউ কারো মুখ দেখেন না। আপনেরা ভদ্রতা ভুলে গেছেন। বিএনপিকে বলবো, সহিংসতা বন্ধ করুন, ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে আসুন। সরকারকে বলছি, সংলাপে ডাকুন। সভাসমাবেশ করার অনুমতি দেন।
বাসদের খালেকুজ্জামান বলেন, দেশকে আজ দ্বিদলীয় শাসন থেকে মুক্ত করতে হবে। জনগণকে রাজপথে নামতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর বলেন দেশে এখন ভোটারবিহীন মন্ত্রী, এমপি, প্রধানমন্ত্রী। এভাবে দেশ চলতে পারে না। জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে এখন জাতীয় নির্বাচন দিয়ে সংকট সমাধান করতে হবে। না হলে ইয়াহিয়া, আইয়ুব শাসকরা যেমন অস্ত্রের জোরে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, তেমনি এ সরকারও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।    

সমাবেশে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ জানুয়ারি, ২০১৫/ রশিদা

সর্বশেষ খবর