বুধবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৫ ০০:০০ টা
সিটি নির্বাচন চট্টগ্রাম

ভোটের যত হিসাব-নিকাশ

ভোটের যত হিসাব-নিকাশ

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এবারের ভোট নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশ। সংখ্যালঘু, জামায়াত-হেফাজতের ভোটব্যাংকের পাশাপাশি পৌনে এক লাখ তরুণ ভোটারও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে এ নির্বাচনে। মূলত চট্টগ্রামে আট শ্রেণির ভোটারই নির্ধারণ করবে কে হচ্ছেন নগরপিতা। এসব ভোটারের কাছে টানতে এরই মধ্যে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন দুই হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ও মোহাম্মদ মনজুর আলম। তাদের মন জয় করতে চলছে বিরামহীন ‘প্রচারযজ্ঞ’। এবার চসিক নির্বাচনে প্রায় ১৮ লাখ ভোটারের মধ্যে ২ লাখ ১৭ হাজার ভোটার রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বৃহত্তর বাকলিয়া, হালিশহর এবং পতেঙ্গা এলাকার ৫ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৮ জন ভোটার রয়েছেন। শ্রমিক ও ভাসমান ভোটারের সংখ্যাও অন্তত ৩ লাখ। নারী ভোটার সংখ্যা অন্তত পৌনে ৮ লাখ। এ ছাড়া তরুণ ভোটার রয়েছে ৭৩ হাজার ৮৫০ জন। জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী দলের প্রায় আড়াই লাখ ভোটার রয়েছে। চট্টগ্রামে সুন্নী, মুনিরিয়া যুব তবলিগের আলাদা একটি ভোটব্যাংক রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটিতে অবস্থান নেওয়া রাউজানের সব রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও পৃথক পৃথক ভোটব্যাংক রয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের একান্ত সচিব রায়হান ইউসুফ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনে তরুণ, নারী, সংখ্যালঘু এবং ভোটব্যাংক খ্যাত বাকলিয়া, হালিশহর এবং পতেঙ্গার ভোটারদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। ভোটাররা আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষেই রয়েছেন। গণসংযোগকালে এমন চিত্রই দেখা গেছে।’ বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমের ছেলে সরোয়ার আলম বলেন, ‘সব শ্রেণির ভোটারদের টানতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বিগত সময়ে ওই এলাকার উন্নয়ন চিত্রও তুলে ধরা হচ্ছে ভোটারদের কাছে।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি ও চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের নায়েবে আমির আফসার উদ্দিন চৌধুরী রাউজানের বাসিন্দা। তাদের সবারই আলাদা আলাদা ভোটব্যাংক রয়েছে। জানা গেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুই লাখের ওপরে থাকা ভোটব্যাংক আ জ ম নাছিরের অনুকূলে। সেখানে সদ্য বিদায়ী মেয়র হানা দিয়েও তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেননি। অন্যদিকে জামায়াত-শিবির, হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর প্রায় আড়াই লাখ ভোটারের ঝোঁক মনজুর আলমের দিকে। সেখানে নানা সমীকরণে হেফাজতের কিছু ভোটার টানতে পারেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাছির। এ ছাড়া মুনিরিয়া ও সুন্নিপন্থিদের বড় একটি অংশও আ জ ম নাছিরের ভক্ত বলে জানা গেছে।
পূজা ও জন্মাষ্টমী পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার জানান, চট্টগ্রাম সনাতনী সম্প্রদায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও শান্তির লক্ষ্যে সনাতনীদের পরম শুভার্থী হাতি প্রতীকের প্রার্থী আ জ ম নাছিরের পক্ষেই রয়েছেন। এ নেতার দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক-সামাজিক পদযাত্রায় সনাতনীদের পাশেই ছিলেন, আছেন ও ভবিষ্যতেও থাকবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। অভিন্ন কণ্ঠে হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ নেতা ও জাসদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইন্দু নন্দন দত্ত বলেন, নগরভবনকে আমরা কোনোভাবেই বোমাবাজ-আগুন সন্ত্রাসীর প্রশ্রয়দাতাদের হাতে তুলে দিতে পারি না। তাই শান্তির পক্ষে আ জ ম নাছিরের জন্য ভোট চেয়ে ঘরে ঘরে যাচ্ছি। চট্টগ্রাম মহানগর ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী সবাই মনজুরের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে মেয়র হিসেবে মনজুর বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ বৃহত্তর বাকলিয়া, হালিশহর এবং পতেঙ্গা এলাকার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ভোটারের মন জয় করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন নাছির ও মনজু। বিগত সময়ে এই তিন এলাকায় যে প্রার্থী বেশি ভোট পেয়েছে-তিনিই নগরপিতার আসনে বসেছেন বলে জানা গেছে। ২০১০ সালের নির্বাচনে মনজুর আলম ওই তিন এলাকায় ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়েছিলেন। এর আগে ২০০৫ সালের নির্বাচনেও তৎকালীন নির্বাচিত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ৩০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এবারও ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে ওই তিনটি এলাকা। বাকলিয়া এলাকার ভোটার আবদুল আজিজ নামে এক ব্যবসায়ী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তাদের পছদের প্রার্থী মনজুর আলম। এর আগের বারও তারা মনজুরকে সমর্থন দিয়েছেন। এবারও হেরফের হবে না। প্রায় পৌনে ১ লাখ তরুণ ভোটার নিয়েও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রভাবশালী দুই প্রার্থী। প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি ইশতেহারে যিনি বেশি তরুণদের বেশি প্রাধান্য দেবেন তরুণ প্রজন্ম তাকেই নগরপিতার আসনে বসানোর চেষ্টা করবেন। এদিক থেকে মেয়র হিসেবে অপেক্ষাকৃত তরুণ হলেন আ জ ম নাছির। তবে এ নিয়ে চিন্তিত নন মনজুরও। ইশতেহারে তরুণদের জন্য চমক সৃষ্টি করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। পৌনে ৮ লাখ নারী ভোটারও চান তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিতে। এক্ষেত্রে যিনি নারীবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন-তাকেই মেয়রের আসনে বসাতে চায় নারী সমাজ। জামালখান ওয়ার্ডে সালমা সুলতানা আজাদ নামে এক নারী ভোটার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নারীবান্ধব নগরী যিনি করার প্রতিশ্রুতি দেবেন-তাকেই আমরা ভোট দেব।

সর্বশেষ খবর