বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০১৫ ০০:০০ টা
জনপ্রশাসন

ক্ষোভে পদোন্নতি বঞ্চিতরা রিভিউ আবেদন

জনপ্রশাসনে বৃহৎ পরিসরে পদোন্নতি দেওয়া হলেও মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন কতিপয় সৎ কর্মকর্তা। সর্বশেষ পদোন্নতি বঞ্চনার ঘটনা কর্মস্থলের পরিবেশে তৈরি করেছে ব্যাপক বৈষম্য ও বিব্রতকর অবস্থা। অনেক সিনিয়র কর্মকর্তাকে এখন জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে হয়। সরাসরি তোপের মুখে না পড়লেও পাশের কক্ষে থাকা ব্যাচমেটের সঙ্গে অনেকের তৈরি হচ্ছে দূরত্ব। মেধা তালিকার ওপরে থাকা সত্ত্বেও অনেকে এখনো যুগ্ম-সচিব। অথচ কোটায় নিয়োগ পাওয়া ব্যাচমেট এখন অতিরিক্ত সচিব কিংবা সচিবের চেয়ারে বসে আছেন। সব ধরনের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেউ বাদ পড়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তালিকার কারণে, আবার কেউ হচ্ছেন ব্যক্তিস্বার্থ ও প্রতিহিংসার বলি। জ্যেষ্ঠতা বঞ্চিত হয়ে পদোন্নতি বিবেচনার তালিকাতেই অনেকে নাম লেখাতে পারেননি এখনো। অথচ এদের বেশিরভাগেরই চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও প্রায় দুই মাস হতে চলল, কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় পুরো প্রশাসনজুড়ে চলছে ভয়ানক এক অস্বস্তিকর অবস্থা। এমনই একজন সৎ, মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা ড. জাকিরুল ইসলাম। টানা পাঁচ বার বঞ্চিত হওয়ার পর উপসচিব থেকে যুগ্ম-সচিব পদে উন্নীত হলেও আবারও আটকে গেলেন তিনি অতিরিক্ত সচিব পদে প্রমোশনের ক্ষেত্রে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও কতিপয় আমলার ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বারবার বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি। তার মতো আরও বেশ কয়েকজন যোগ্য ও প্রাজ্ঞ কর্মকর্তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে এই অতিরিক্ত সচিব পদে প্রমোশনের ক্ষেত্রে। মেধাবীদের জন্য ‘সিভিল সার্ভিস’ বলা হলেও কতিপয় সুবিধাবাদী আমলার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থে এর ব্যত্যয় ঘটছে বারবার। জানা গেছে, প্রশাসনের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট ও কঠোর নির্দেশনা ছিল- সব যোগ্য ও মেধাবীকে জ্যেষ্ঠতা ও অগ্রণীর ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদানের জন্য। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে কতিপয় কনিষ্ঠ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ সব পদ দখল করে নিয়ে সিভিল সার্ভিসের পুরনো সেই শৃঙ্খলা ও ঐতিহ্যের বারোটা বাজিয়েছেন। জানা গেছে, কর্মজীবনে ড. জাকিরুল ইসলামকে তার কতিপয় ঈর্ষাপরায়ণ সহকর্মীই নিজেদের কর্তৃত্ব, আধিপত্য ও ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন হতে পারে এই ভয়ে বারবার বঞ্চিত করে আসছেন। যুগ্ম-সচিব পদে তাকে বারবার বঞ্চিত করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হলে তার নির্দেশেই মূলত শেষ পর্যন্ত পদোন্নতি হয় ড. জাকিরুল ইসলামের।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান, ছয়টি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি, এমফিল ও পিএইচডিসহ মোট আটটি ডিগ্রি রয়েছে সিভিল সার্ভিসে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব ড. জাকিরুল ইসলামের।
 ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত তৎকালীন বিরোধী নেতার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নানাবিধ কারণে তার সঙ্গে আর কাজ করেননি ড. জাকির। বিএনপি সরকারের আমলে তাকে একাধিকবার বদলি করাসহ জেলা প্রশাসক পর্যন্তও করা হয়নি অন্যায় আবদার না মানার কারণে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন তীব্র প্রতিবাদমুখর এবং তখনকার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছিলেন তিনি। একই অজুহাতে তাকে দুবার অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তারই কতিপয় ব্যাচমেট আর সহকর্মীর ষড়যন্ত্রের কারণে।

সর্বশেষ খবর