রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নজির সৃষ্টি হবে

- এনবিআর চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নজির সৃষ্টি হবে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নজির স্থাপিত হবে। তিনি বলেন, সাধারণত প্রতিবছর রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হয়ে থাকে। কিন্তু সরকারের রূপকল্প-২০১২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি বছরে প্রায় ৩০% রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে। এই হার আগের বছরগুলোর যে কোনো সময়ের চেয়ে উচ্চাভিলাষী বলে কেউ কেউ মত দিলেও এই চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যমাত্রা এনবিআর অতিক্রম করবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এনবিআর চেয়ারম্যান এই প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন।

রাজস্ব আদায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হলেও গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০০০ কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৩০,১২৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত বছর আদায়  হয়েছিল ২৮,২১৯ কোটি টাকা। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। সার্বিক অর্থনীতির গতি প্রবৃদ্ধিতে মন্দাভাব থাকলেও এই লক্ষ্যমাত্রা আদায় হবে। তিনি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমাদের প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে বিপিসি ও পেট্রোবাংলার কাছে রয়েছে বেশির ভাগ পাওনা। প্রধানন্ত্রীর দফতর, অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে একাধিক বৈঠকে এসবের নিষ্পত্তি চূড়ান্ত পর‌্যায়ে আছে। সর্বশেষ এনবিআরে ৩ অক্টোবর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। বৈঠকে বিপিসির চারটি বিপণন কোম্পানির পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও এশিয়াটিক অয়েলের কাছে অগ্রিম ভ্যাট বাবদ ২,০১৮ কোটি টাকা পরিশোধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। এই ভ্যাট যে কোনো সময়ে আদায় হবে। এসব প্রতিষ্ঠান জুলাই ২০১৩ থেকে জুন ২০১৫ এ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক ডিজেলের ওপর নির্ধারিত প্রতি লিটার ভ্যাট ও ব্যবসায়ী পর‌্যায়ে ভ্যাট ৯.৬৮ টাকা হারে নির্ধারণ ও তা ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করলেও তা যথাযথভাবে পরিশোধ করেনি। এই টাকা বিপিসির নিজস্ব অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। ফলে ট্যাক্স বাবদ ২,০১৮.১০ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। অন্যদিকে বিপিসির কাছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের দীর্ঘদিনের ভ্যাট বাবদ মোট ৬০৩.২৫ কোটি টাকা আগের পাওনা পড়ে আছে। এই বকেয়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জমা হবে। মো. নজিবুর রহমান বলেন, পেট্রোবাংলার কাছে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের ভ্যাট প্রায় ২১,০০০ কোটি টাকার দাবিনামা সৃষ্টি হয়। ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিপণন পর‌্যায়ে পেট্রোবাংলার অধীনে গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো উৎপাদনকৃত গ্যাস বিতরণের সময়ে গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট বাবদ আদায়কৃত প্রায় ১৩,২৭৮ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়নি। ফলে এই টাকা এবং ভ্যাট আইন অনুযায়ী সুদ দণ্ড বাবদ আরও ৯,০৮০ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। এ বিষয়টি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নজরে আনা হলে তিনি একটি ডিও চিঠি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ মার্চ তার সভাপতিত্বে একটি সভাও হয়। জ্বালানি উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সভায় যথাযথভাবে কর প্রদানের সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত তা পরিশোধের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা আশা করছি, এটিও শিগগিরই আদায় হবে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, আমরা নিশ্চিত বছর শেষে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। বকেয়া কর আদায়, আদালতে ঝুলে থাকা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ, বড় ধরনের রাজস্ব ফাঁকি রোধ, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বন্ধে তৎপরতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অর্জন হবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, ব্যবসাবান্ধব ও ন্যায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সম্মানিত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক ও পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনে সম্প্রতি এনবিআর নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে কর্মকর্তাদের মধ্যেও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার প্রায় ৭% কম। দীর্ঘ বৃষ্টি ও নানা জটিলতায় এই ব্যয় কম হয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে উৎসে কর্তনের ওপর কর ও ভ্যাট আদায় কম হয়েছে। তবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বেড়ে যাবে। সাধারণত জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। শুষ্ক মৌসুমে এ কাজ শুরু হলে স্বাভাবিক নিয়মে রাজস্ব আসবে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে অন্য বছরগুলোতে অক্টোবরে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের সময় শেষ হয়ে যায়। এবার করদাতাদের অধিকতর সুবিধা দিতে এই সীমা নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখনো অনেক করদাতা রিটার্ন দাখিলের অপেক্ষায় আছেন। রিটার্নের সময় উত্তীর্ণ হলে রাজস্ব খাতে ট্যাক্স বেড়ে যাবে। তাছাড়া চলতি মাসে শীতকালীন একটা করমেলা আয়োজনে অর্থমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।  এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, অন্যান্য বছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা প্রথম ছয় মাসে কম করে নির্ধারণ করা হতো এবং পরের ছয় মাসে বেশি করে ধরা হতো। কিন্তু বর্তমান বছরে সবাইকে সম্পৃক্ত করার জন্য এবং মাসভিত্তিক কৃতকর্মের মূল্যায়নের স্বার্থে প্রতি মাসে সমানভাগে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে মনিটরিং বাড়বে, অন্যদিকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। সব মিলিয়ে বছর শেষে রাজস্ব আদায়ে এনবিআর নজির স্থাপন করবে।

সর্বশেষ খবর