সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে লিটনের

মনোনয়ন চাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনে প্রথমবারের মতো ২০০৮ সালের নির্বাচনে সবকটিতে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা। এ জয়ের পেছনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের চমক ছিল বলে মনে করেন দলের নেতারা। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়েছেন তারা। তবে এবার নির্বাচনের পর এমপিদের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে রাজশাহী আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটনের।

এমপিদের সঙ্গে লিটনের দূরত্ব বাড়ার কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, গত সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর), কিংবা রাজশাহী-৪ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করেন লিটন। এ জন্য ওই দুটি আসনের বর্তমান এমপিরা তার ওপর খুশি নন। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কৃতিত্ব দাবি ও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়া নিয়েও শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে সদর আসনের এমপির সঙ্গে। রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গেও সম্পর্কের টানাপড়েন রয়েছে। রাজশাহী ৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে যেমন রাজশাহী শহরে, একইভাবে চারঘাট-বাঘায় লিটনকে কোনো দলীয় অনুষ্ঠানে দেখা যায় না।

জানা যায়, ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বিগত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন লিটন। রাজশাহী-৩ ও রাজশাহী-৪ আসনে দলের মনোনয়ন চান তিনি। কিন্তু মনোনয়ন পান যথাক্রমে আয়েন উদ্দিন ও আবদুল ওয়াদুদ দারা। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ দুই এমপির সমর্থকরা খায়রুজ্জামান লিটনের প্রতি বিভিন্নভাবে তাদের অসন্তষ্টি প্রকাশ করে আসছেন। পবা ও মোহনপুরে কোনো অনুষ্ঠানে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে অতিথি করা হলে সেখানে পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। গত সপ্তাহে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করতে বাধ্য হন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আয়েন উদ্দিন এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এমপি হলেও ওই অনুষ্ঠানগুলোতে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। এ কারণে ক্ষুব্ধ কর্মীরা পাল্টা কর্মসূচি দেয়।

একইভাবে পুঠিয়া-দুর্গাপুরে কোনো কর্মসূচিতে ডাকা হয় না লিটনকে। সম্প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ দুর্গাপুরে তাকে নিয়ে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু এমপিপন্থিদের বাধার কারণে তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। আবদুল ওয়াদুদ দারা জানান, ‘ব্যস্ততার কারণে আর আগের মতো লিটন ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারি না।’

রাজশাহীর সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটনের এখন শীতল সম্পর্ক। আগে একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠানে গেলেও এখন কেউ কারও সঙ্গে যান না। নগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বাদশার ঘনঘন যাতায়াত ছিল। এখন আওয়ামী লীগের অফিসমুখো হন না। মন্ত্রণালয়ের চিঠি গোপন রেখে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাপতির দায়িত্ব পালন, নগরীর বিভিন্ন দফতরে আওয়ামী লীগ নেতাদের তৎপরতায় ক্ষুব্ধ বাদশা। এ ছাড়া নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা প্রকাশ্যে বাদশার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দফতরে একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেন নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। ঘটনার জের ধরে বাদশা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ নেন। গত বুধবার খায়রুজ্জামান লিটন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখেন। এ নিয়েও ক্ষোভ জানিয়েছেন এমপি বাদশা।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভায় খায়রুজ্জামান লিটন যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। প্রত্যেকে নিজের মতামত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো।’

সর্বশেষ খবর