সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ভাতা নিয়ে ভোগান্তিতে শিক্ষকরা

চরম অর্থ সংকটে কার্যক্রম বন্ধ

লাকমিনা জেসমিন সোমা

তেঁতুলিয়া পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন রুহুল আমিন। অবসরে গেছেন বছর চারেক আগে। তখন থেকেই অবসর সুবিধার টাকা পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। এরই মধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসাও করাতে পারেননি। অবশেষে অবসরের টাকা না পেয়েই জীবন থেকে চিরকালের অবসরে চলে যান তিনি। তার পরিবার সূত্র জানায়, টাকার অভাবে চিকিৎসাহীনভাবে ধুঁকে ধুঁকে এক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। কেবল রুহুল আমিন নন, অবসর সুবিধার টাকা পেতে এভাবে হাজার হাজার শিক্ষককে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবসর সুবিধা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য সচিবের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পাঁচ মাস ধরে এ সংক্রান্ত কোনো কাজই করতে পারছেন না শিক্ষকরা। সেই সঙ্গে ১১ নভেম্বর কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিবেরও মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ ফান্ডের টাকা পাওয়া নিয়ে নতুন করে শঙ্কায় পড়েছেন প্রায় পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী। অবসর সুবিধা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১২ জুন বোর্ডের দাফতরিক কাজের দায়িত্বে থাকা সদস্য সচিব শিক্ষক নেতা আসাদুল হকের মেয়াদ শেষ হয়। পদাধিকার বলে বোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষা সচিব হলেও অবসর সুবিধা সংক্রান্ত কাজের দায়িত্বে থাকেন সদস্য সচিব। আর এ কারণেই জুন মাস থেকে অবসর সুবিধা সংক্রান্ত সব কাজ বন্ধ রয়েছে।

রাজধানীর নীলক্ষেতে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ভবনে অবসর বোর্ড কার‌্যালয়ের একটি সূত্র বলেছে, প্রায়ই ৪৭ হাজার শিক্ষকের অবসর সুবিধা প্রাপ্তির আবেদন জমা পড়ে আছে। সদস্য সচিব না থাকার বিষয়টি জেনেও প্রতিদিন ভিড় করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। অবসর সুবিধা নিয়ে শিক্ষকদের এমন হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতির মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের’ টাকা পাওয়ার বিষয়টি। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ট্রাস্টটি যাত্রার শুরুতেই হোঁচট খায়। বিএনপি সরকার ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ট্রাস্টের কার্যক্রম বন্ধ রাখে। এতে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে যে দুই ভাগ টাকা কেটে রাখা হয় তা বন্ধ থাকায় পাঁচ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ট্রাস্টে জমা হয়নি। ২০০২ সাল থেকে শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ৫ টাকা নেওয়ার নিয়মটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ফান্ডের অর্থ সংকট             চরমে পৌঁছায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে শিক্ষক নেতা শাহজাহান আলম সাজুকে সদস্য সচিব করে পুনরায় কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর ১১ অক্টোবর তার মেয়াদও শেষ হয়েছে। শিক্ষকদের শঙ্কা, ট্রাস্টের অর্থ সংকট ও সদস্য সচিব না থাকার কারণে অবসর সুবিধা বোর্ডের মতো এবার কল্যাণ ট্রাস্টের অবস্থা একই হলে তাদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। জানা গেছে, অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট শিক্ষকদের এ দুটি অর্থ সুবিধার ফান্ডের এখন বড় সমস্যা অর্থ সংকট। বিশেষ করে অষ্টম বেতন স্কেল চালুর পর নতুন বেতন অনুসারে অবসর ও কল্যাণ সুবিধার প্রাপ্তি দ্বিগুণ হওয়ায় এ সংকট যেন মহাসংকটে পরিণত হয়েছে। অবসর সুবিধা ফান্ডের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের মূল বেতনের চার শতাংশসহ সরকারের দেওয়া অনুদান মিলিয়ে জমা হয় গড়ে ১৭ কোটি টাকা। প্রতি মাসে অবসরে যাচ্ছেন গড়ে ৯৫০ জন শিক্ষক। এ হিসাবে মাসে ঘাটতি পড়ছে কমপক্ষে ৪০ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর