মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

ফেসবুক বন্ধ : অনলাইন বাণিজ্য কমেছে ৮০ ভাগ

জিন্নাতুন নূর

ফেসবুক বন্ধ : অনলাইন বাণিজ্য কমেছে ৮০ ভাগ

দেশের বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়ায় অনলাইন ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এত বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীকে টার্গেট করে ফেসবুকে ই-কমার্স ব্যবসা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ফেসবুক বন্ধ থাকায় তাদের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আর দ্রুত এ মাধ্যম খুলে দেওয়া না হলে ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অনেকেই পথে বসবেন। নাকশতার ঘটনা এড়াতে সরকারের নির্দেশে টেলি-যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ফেসবুক, ভাইবার, ট্যাঙ্গো, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখেছে। গত ১৮ থেকে গতকাল ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৬ দিনে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের ফলে ই-কমার্স বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার প্রায় পাচ্ছেন না বললেই চলে। তারা জানান, বিকল্প মাধ্যমে কিছু ব্যবহারকারী ফেসবুক ব্যবহার করলেও প্রকৃত ক্রেতারা ফেসবুকে নেই। আগে দিনে যেখানে একজন বিক্রেতা গড়ে ১০ থেকে ১৫টি পণ্য হোম ডেলিভারি করতেন, এখন একটি পণ্যও বিক্রি করতে পারছেন না।

এদিকে গতকাল সাংবাদিকদের নির্দেশনা এলেই ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী তারানা হালিম। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কবে খুলে দেওয়া হবে তা তিনি বলেননি। ই-কমার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, ফেসবুক বন্ধ থাকায় অনলাইন ব্যবসা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি  মেনে নিলেও দ্রুত ফেসবুক খুলে না দিলে অনেক অনলাইন ব্যবসায়ীকে পথে নামতে হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিভিন্ন ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বেশকিছু আইটেম দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসেন। আবার কিছু দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। এতে করে পণ্য পরিবহনে তাদের একদিকে যেমন খরচ হচ্ছে অন্যদিকে এসব পণ্যের অনেকগুলো পচনশীল হওয়ায় তা বিক্রি না হওয়ায় তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। জানতে চাইলে ‘কেনাবেচা ডটকম-’এর পরিচালক সাদি মোহাম্মদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের ওয়েবসাইট থাকলেও ফেসবুকে ক্রেতাদের থেকে বেশি সাড়া পাই। এখানেই আমরা পণ্যের প্রচার বেশি করি। কিন্তু সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমটি বন্ধ থাকায় গত কয়েকদিনে আমাদের ৯৫ শতাংশ ব্যবসা পড়ে গেছে। আগে যেখানে ঢাকার মধ্যেই আমরা ৪০-৫০টি পণ্যের অর্ডার পেতাম এখন বড়জোর ৩-৪টি অর্ডার পাচ্ছি। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হচ্ছে। ফেসবুকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষও তাদের নতুন নতুন অফারের প্রচার করে থাকেন। কিন্তু কদিন ধরে তা বন্ধ থাকায় তারা নিজেদের খাবার সম্পর্কে আপডেট দিতে পারছেন না। এতে রেস্টুরেন্টগুলোর রাজস্ব আদায় কমে গেছে। আশানুরূপ ক্রেতা না পাওয়ায় ব্যবসাও মন্দা যাচ্ছে। ‘স্ট্রিট বারবিকিউ’ নামে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক মইনুল হাসান জানান, ফেসবুক বন্ধ থাকার কারণে তাদের আগে যে রাজস্ব আদায় হতো- এখন তা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। তাদের ক্রেতারা আগে যেখানে ফেসবুকের আপডেট দেখে এখানে খেতে আসতেন, এখন তা সম্ভব না হওয়ায় ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেলবাজার ডটকম’-এর বিপণন কর্মকর্তা ফারহানা সাথী জানান, ফেসবুক বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিনে তারা কোনো অর্ডার পাননি। ফেসবুকের মাধ্যমেই তারা সারা দেশে পণ্য বিক্রি করেন। ‘সৌহাদ্য ফ্যাশন’-এর এডমিন সম্পি এই প্রতিবেদককে জানান, আমাদের মতো অনেক নারীই ক্ষুদ্র আঙ্গিকে ঘরে বসে পণ্য তৈরি করে ব্যবসা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাচ্ছেন। কিন্তু ফেসবুক বন্ধ করায় তারা হঠাৎ করে ক্ষতিতে পড়ছেন। তিনি বলেন, আমরা এই কয়দিনে নিজেদের নতুন পণ্যের যেমন প্রচারণা চালাতে পারছি না, অন্যদিকে কোনো পণ্যের অর্ডারও পাচ্ছি না।

সর্বশেষ খবর