শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

গুলশান-বনানী লেক দখলমুক্ত করতে রাজউকের অভিযান

বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদনের জের

নিজস্ব প্রতিবেদক

গুলশান-বনানী লেক দখলমুক্ত করতে রাজউকের অভিযান

গুলশান-বনানী লেক দখলমুক্ত করতে গতকাল অভিযান চালায় রাজউক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অবশেষে গুলশানের ২৯ নম্বর সড়কের লেকপাড়ে গজিয়ে ওঠা বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার মধ্যদিয়ে গুলশান-বনানী লেক জবর দখলমুক্তির অভিযান শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গতকাল সকাল ৮টায় রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়ার নেতৃত্বে গুলশান থানা পুলিশের সহায়তায় এ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। গুলশান-১ এর ২৯ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তের একটি স্থানেই লেকের ২১ শতক জায়গা দখল করে টিনশেড ঘরবাড়ি বানিয়ে ‘ভাড়া বাণিজ্য’ চালানো হচ্ছিল। গতকাল রাজউকের দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে বুলডোজার ওসব বাড়িঘর উচ্ছেদ করে। সংস্থাটির উচ্ছেদ কর্মীরা ভিটের মাটি পর্যন্ত কেটে নিয়ে যায়। উচ্ছেদ চলাকালে রাজউকের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, লেকের দখলকৃত জমি উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী এবং হাইকোর্টের নির্দেশে জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর অনুসারে অভিযানে নেমেছে রাজউক। তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে এবং গুলশান-বনানী লেকের উভয়পাড় থেকেই জবর দখলবাজদের হটিয়ে দেওয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযানে চেয়ারম্যান ছাড়াও রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজউক কর্মকর্তারা জানান, গুলশান-বনানী লেকের পূর্ব পাড়ে বিরাট অংশ দখলপূর্বক মাটি ভরাট করে প্রভাবশালী চক্র বেশকিছু বাড়িঘর নির্মাণ করে। রাজউক গত ১৪ বছর দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়েও দখলবাজদের হটাতে ব্যর্থ হয়। সেখানে উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নিলেই দখলবাজ প্রভাবশালীরা কখনো ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আবার কখনো জাল্লজালিয়াতির মাধ্যমে বানানো উচ্চ আদালতের নানা আদেশ নির্দেশের দোহাই দিয়ে রাজউককে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। এ সুযোগে লেকপাড় ঘেঁষা শতাধিক বাড়ির মালিকও লেকের জায়গা দখল করে তাদের পাকা ভবনাদির সম্প্রসারণ ঘটিয়েছে। এদিকে, উচ্ছেদকৃত পরিবারগুলোর দাবি, ২০০২ সাল থেকে তারা বৈধভাবেই বসবাস করছেন। জাকির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী নিজেকে বাড়ির মালিক দাবি করে জানান, ২০০৩ সালে হাইকোর্ট থেকে তার পক্ষে একটি রায় ও রুল জারি রয়েছে। তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দুটি রিট পিটিশন (নং-৬৯১৭/২০০১ এবং ৭৩৭৮/২০০৩) দাখিল করলে আদালত এ রায় ও রুল জারি করেন। কিন্তু সে সময় থেকেই রাজউক দফায় দফায় তাকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসছে বলে দাবি করেন জাকির হোসেন। তবে রাজউকের এস্টেট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজউককে উচ্ছেদ না করার নির্দেশ  দেয় হাইকোর্ট। তবে মামলাটি আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়ালে সর্বোচ্চ আদালত রাজউকের পক্ষে রায় দেয়। এরপর থেকে রাজউক একের পর এক নোটিস দিয়ে এবং বারবার উচ্ছেদ অভিযানের উদ্যোগ নিয়েও প্রভাবশালী বাড়ি মালিকদের হটাতে ব্যর্থ হয়।

বনানী লেকের পশ্চিম পাশেও বিরাট অংশ দখল করে কড়াইল বস্তির ব্যাপক বিস্তার ঘটানো চলছে। সেখানে দোতলা-তিন তলা ভবনও গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক। একইভাবে গুলশানের শাহজাদপুর এলাকায় মরিয়ম টাওয়ার-২ থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত লেকপাড় ঘেঁষে রাজউকের চমৎকার সড়ক নির্মাণের উদ্যোগও দখলবাজদের দৌরাত্ম্যে বারবার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেখানে লেকের একাংশ ভরাট করে রাজউক সড়ক নির্মাণ করতেই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দখলবাজ রাস্তার প্রায় অর্ধেকটা দখল করে পাকা ভবন, গাড়ি গ্যারেজ ও বড় বড় মার্কেট পর্যন্ত গড়ে তুলেছে। রাজউকের একশ্রেণির কর্মচারী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা অলিখিত ইজারা দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব ব্যাপারে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় তা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

শিগগির দখলবাজদের উচ্ছেদ করে লেকপাড়ের সড়ক নির্মাণ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকেও তাগিদপত্র পাঠানো হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই রাজউক কর্তৃপক্ষের দুটি বৈঠকে গুলশান-বনানী লেক ঘিরে লাগাতার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। তবে রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া গতকাল জানান, দখলবাজরা যতই প্রভাবশালী হোক তাদের সড়ক ও লেকের জায়গা থেকে অবশ্যই উচ্ছেদ করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর