সোমবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

নাগরিক সেবা সংস্থাকে একক কাঠামোয় আনার সুপারিশ

যৌথ গবেষণা প্রতিবেদন

আকতারুজ্জামান

নাগরিক সেবা সংস্থাগুলোকে একক কাঠামোয় আনার সুপারিশ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) ও সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট কমিউনিকেশন যৌথভাবে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক সুবিধা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ। এ কারণে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে একটি একক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় আনতে হবে। ‘আগামী প্রজন্মের ঢাকা, আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকায় প্রায় ৫২টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সেবা প্রদানের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এগুলো ২০টি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ও চালিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্পোন্নয়ন ও বিনোদনমূলক সেবা প্রদান করছে। কিন্তু এসব সংস্থা আর প্রতিষ্ঠানের একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সমন্বয় নেই। ফলে নাগরিক সেবায় নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরকারি, বেসরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বিত প্রক্রিয়ায় সেবা পরিকল্পনা, সেবা প্রদান, সেবার মানোন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা একেবারেই অনুপস্থিত। এ ছাড়া রাজধানীতে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় যানজট, অপর্যাপ্ত নগর কাঠামো নির্মাণ, ছিনতাই-রাহাজানি বেড়ে চলছে। সমন্বিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমের অভাবে রাজধানীতে সারা বছরই খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে, পানির পাইপ ভেঙে সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে রাজধানীর শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ সেবাদানে নিয়োজিত সংস্থার দায়বদ্ধতার ওপর সন্তুষ্ট নয়। প্রায় ৭১ ভাগ মানুষ সেবাদানকারী সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে না। ৬৩ ভাগ মানুষ সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর দুর্নীতির কথা শুনেছে। পুরো ঢাকার ব্যবস্থাপনার কাজে একক কোনো সংস্থা দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। প্রতিটি সংস্থা নিজস্ব পরিকল্পনা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছে। সেবা গ্রহণকারীরা সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর প্রতি দারুণভাবে অসন্তুষ্ট। বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডেসা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেবার মান নিয়ে মানুষ খুবই অসন্তুষ্ট ও হতাশ। এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম  নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। সেবার মান বাড়াতে গবেষণাধর্মী এ প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করেছেন দেশের পরিকল্পনাবিদরা। এতে বলা হয়েছে, মহানগরীর সব প্রতিষ্ঠানকে একক কর্তৃপক্ষ ও কর্তৃত্বের অধীনে আনতে পারলেই নগরীর সেবা কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হবে। সরকারের অর্থ অপচয় রোধ ও মানুষের দুর্ভোগ কমানো সম্ভব হবে। সেবা প্রাতিষ্ঠানিক একীভূতকরণ সব নগর সেবাসমূহকে একটি একক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বা একক নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন কাঠামোর অধীন করার বিকল্প নেই। এতে তুলনামূলক স্বল্প সময়ের মধ্যে নাগরিক সেবাসমূহ প্রদান করা সম্ভব হবে।

পরিকল্পনাবিদরা বলেন, পঞ্চাশ দশক থেকে শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর পেছনের কারণ হচ্ছে রাজউকের সদিচ্ছার অভাব, অযোগ্যতা, নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থাসমূহের সমন্বয়হীনতা ইত্যাদি দায়ী। সেবাদানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও সেবার মান সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউশন অব প্লানার্স-এর প্রেসিডেন্ট ড. গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমন্বয়হীনতার অভাবে ওয়াসা রাস্তা খুঁড়ছে। কিছুদিন পর দেখা যাচ্ছে বিটিসিএল টেলিফোনের লাইনের কাজে একই রাস্তা খুঁড়ছে। আবার কিছুদিন পর রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে একই রাস্তায়। সমন্বয়হীনতায় এক রাস্তা বার বার খুঁড়তে হচ্ছে। সমন্বয়হীনতা না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে নগরবাসীর। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হলেও সঠিক সময়ে সেগুলো মেরামতও করা হচ্ছে না। সমন্বয়হীনতায় নাভিশ্বাস হয় নাগরিকদের। সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর