রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
পৌরসভা নির্বাচন

প্রচারণা শেষ, অপেক্ষা ভোটযুদ্ধের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রচারণা শেষ, অপেক্ষা ভোটযুদ্ধের

নির্বাচনী সামগ্রী ঢাকা থেকে সব পৌরসভায় পাঠানো হচ্ছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় প্রার্থীরা সারছেন শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা। আগামীকাল সোমবার মধ্যরাত ১২টায় প্রচারণার সময় শেষ হচ্ছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাল থেকে মাঠে নামবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। একই সঙ্গে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকাও ছাড়তে হবে সোমবার ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টার আগেই। এদিকে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতির শেষ ধাপ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচন কমিশন।

কমিশন জানিয়েছে, ব্যালট পৌঁছে গেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আজ মধ্য রাত থেকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইলে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করতে আগামীকাল থেকে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। গত দুই দিন গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস থেকে পৌরসভাভিত্তিক ব্যালট পেপার ও নির্বাচনী সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে ইসি। ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় অনুষ্ঠেয় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে ১২ হাজার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর সোমবার মধ্যরাত ১২টার আগ পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারবেন তারা। প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ ১৯টি রাজনৈতিক দলের ছয় শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন মেয়র পদে। তবে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে নির্দলীয়ভাবে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, মাঠপর্যায়ে নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব কার্যক্রম করতে হবে তার বিস্তারিত নির্দেশনাসহ ১২টি পরিপত্র দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ভোটের আয়োজন শেষ করবেন। বিধিলঙ্ঘন, অভিযোগসহ যেসব বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তারা ইসির নির্দেশনা চাইবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি। সার্বিক বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। প্রচারের শেষ সময়ে বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এই কর্মকর্তা বলেন, সোমবার রাত ১২টা থেকে কোনো প্রচারণা থাকবে না। ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এসব পৌরসভায় ভোট হবে।ব্যালট পেপার বিতরণের তদারকিতে থাকা ইসির উপ-সচিব সাজাহান খান জানান, গতকাল পর্যন্ত পৌর নির্বাচনের দুই কোটি ১০ লাখের বেশি ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী ঢাকা থেকে সব পৌরসভায় পাঠানো হয়েছে। সামসুল আলম বলেন, চাঁদপুরের ছেংগারচরের মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কথা রয়েছে। আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি।

 

এদিকে ২৩৪ পৌরসভার মধ্যে অন্তত ছয় পৌরসভায় মেয়র পদে, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত মেয়র পদে ৪০ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

৬৫ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা প্রস্তুত

নির্বাচনকে সামনে রেখে সাড়ে ৩ হাজার ভোটকেন্দ্রের জন্য প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার মিলিয়ে ৬৫ হাজারের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল চূড়ান্ত হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ শেষ হবে আজ। এলাকায় কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনে বাদ দেবে রিটার্নিং কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে মাদারীপুরের শিবচরে অভিযুক্ত কিছু ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্যানেল থেকে বাদও দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের জন্য ৪ কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার ৬৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

শ’খানেক প্রার্থী-সমর্থককে জরিমানা

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণা পরবর্তী একমাসে নির্বাচন কমিশন ৭৮টি অভিযোগের বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তাদের তদন্ত করতে বললেও অধিকাংশেরই প্রতিবেদন এখনো আসেনি। তবে ইসি স্বউদ্যোগে চারজন সরকারদলীয় এমপিকে শোকজ ও সতর্ক করেছে। ইসির এক কর্মকর্তা জানান, পৌর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক উল্লেখ করে শ’খানেক প্রতিবেদন এসেছে। ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জরিমানার পরিমাণ ৫ লাখের বেশি হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সাতকানিয়া থানার ওসি প্রত্যাহার

নির্বাচনে পক্ষপাত ও অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার ওসি ফরিদউদ্দিন খোন্দকারকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার ইসির উপ-সচিব সামসুল আলম এ নির্দেশনা পাঠিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে। এ আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, জেলা প্রশাসক, ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে। চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আকতার বলেন, ‘সাতকানিয়া থানার ওসি প্রত্যাহারের কোনো আদেশ এখনো হাতে আসেনি। আদেশ পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

৪৮ ঘণ্টা যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টা (দিবাগত মধ্যরাত) থেকে ৩০ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। নির্বাচনী এলাকায় বেবি ট্যাক্সি, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পোতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুল আহসান এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় আজ ২৭ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইসি ও রিটার্নিং অফিসারের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারী, নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। জাতীয় মহাসড়ক, বন্দর, জরুরি পণ্য সরবরাহ ও অন্যান্য প্রয়োজনে এ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে হবে।

সর্বশেষ খবর