শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

কলেজছাত্রকে পুলিশের নির্যাতন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা মহানগরীর কার্তিককুল ক্যাম্পের মেঝে শুইয়ে বুক ও হাঁটুর ওপর উঠে বসে দুই পুলিশ কনস্টেবল। একজন দুই হাত চেপে ধরে। আরেকজন লাঠি দিয়ে পায়ের তলা ও হাঁটুতে আঘাত করতে থাকেন। অসহনীয় যন্ত্রণায় চিৎকার করলে আরেক পুলিশ এসে গলা চেপে ধরেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন— খুলনার খানজাহান আলী আদর্শ অনার্স মহাবিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র ইমরান হোসেন (২২)। তিনি খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা সাহা পাড়ার জামাল হোসেনের ছেলে। জানা যায়, কলেজ ছাত্র ইমরানকে ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা কার্তিককুল পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এর আগে রাস্তার ওপরেই তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দেহ তল্লাশি করে। এ সময় ইমরান পুলিশের হাত দেখতে চাইলে তাকে চড় থাপ্পড় মারেন একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই)। পরে ক্যাম্পের মধ্যে নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা নানা পদ্ধতিতে নির্যাতন চালানো হয় ইমরানের ওপর। নির্মম নির্যাতনে ইমরান অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নির্যাতনে নেতৃত্ব দেওয়া ক্যাম্পের একজন উপ-পরিদর্শক ইমরানকে সতর্ক করে বলেন— নির্যাতনের কথা থানা পুলিশকে জানালে তাকে আবারও ধরে এনে পেটানো হবে। থানা পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় ইমরান সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিলেন না। এ সময় গাড়ির মধ্যে থাকা পুলিশের কাছে নির্যাতনের ঘটনাগুলো জানালে তারা ইমরানের পরিবারকে খবর দেয়। পরে রাত ২টার দিকে ইমরানকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইমরানের বাবা জামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে রাতেই ইমরানকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে এখনো ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না। অন্যের সহয়তায় চলতে হচ্ছে। তিনি বলেন- পুলিশ ইমরানের দুই পায়ের তলায়, কোমরে ও হাঁটুতে এত পিটিয়েছে যে, কালছে দাগ পড়ে গেছে। শুধুমাত্র টাকা নেওয়ার জন্যই ইমরানের ওপর বিনা দোষে এ নির্যাতন চালানো হয়েছে।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে একদল পুলিশ ইমরানদের বাড়িতে যায়। সেখানে তারা ইমরানের নাম ধরে ডাকলেও পরিবারের সদস্যরা ভয়ে দরজা খোলেননি। পুরো বিষয়টি জানিয়ে ইমরানের বাবা জামাল হোসেন গতকাল সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ওসি মারুফ আহম্মেদ বলেন- ইমরানকে এক পুড়িয়া গাজাসহ আটক করে ক্যাম্প পুলিশ। থানায় আনার পর ইমরানের পরিবার মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় ইমরানের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ তারা করেনি। এমনকি ইমরানও নির্যাতনের কথা কিছু বলেনি।

সর্বশেষ খবর